ওয়েবসাইট খুলে টাকা আয় করার কথা ভাবছেন? সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে এবং ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্নভাবে টাকা আয় করে থাকে। চলুন, আজকের আর্টিকালে ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায় সে বিষয়টি উন্মোচন করার চেষ্ঠা করি।
ওয়েবসাইট খুলে ইনকাম করা যায় বিভিন্ন উপায়ে। এর মধ্যে রয়েছে গুগল এডসেন্স, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ই-কমার্স বিজনেস, ড্রপ শিপিং, স্পন্সর আর্টিকাল, বিভিন্ন সার্ভিস বিক্রি, ই-বুক বিক্রি, কোর্স বিক্রি, ব্যাকলিংক বিক্রি, ইত্যাদি।
তাছাড়া আবার কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে তারা তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং কর্মকান্ড চালিয়ে টাকা আয় করে। সেগুলোকে ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস বলা হয়।
আজকের আর্টিকালে ওয়েবসাইট খুলে টাকা আয় করার উপায় আদ্যোপান্ত আলোচনা করা হবে। কিন্তু তার আগে, অবশ্যই আপনাকে বুঝতে হবে যে ওয়েবসাইট কি এবং কত ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে।
ওয়েবসাইট কি?
সহজ কথায় বলতে গেলে একটি ওয়েব সার্ভারে থাকা একটি ডোমেইনের অধিনে সকল পেইজ, ছবি, অডিও, ভিডিও, এবং অন্যান্য ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টিকে ওয়েবসাইট বলে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে। কিছু ওয়েবসাইট আছে একদম simple আবার কিছু ওয়েবসাইটে Extra Functionality ব্যবহার করে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করা হয়।
ওয়েবসাইটের প্রকারভেদের মধ্যে রয়েছেঃ
- Personal Blog
- Social Media website
- E-commerce website
- Marketplace Based website
- Company website/Agency
ওয়েবসাইট এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে তো জেনে নিলেন, এখন আসেন কিভাবে ওয়েবসাইট খুলতে হয় সে বিষয়ে একটু ধারনা নেন।
কিভাবে ওয়েবসাইট খুলতে হয়?
আমরা ওয়েবসাইট সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারনা পেয়েছি। কিন্তু কিভাবে এই ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়?
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে ২ টি জিনিস অবশ্যই দরকার হয়। যথাঃ ১। ডোমেইন, ২। হোস্টিং। আর এই দুটি জিনিসই বিভিন্ন কম্পানি থেকে কিনে ভাড়া নিতে হয়।
একটি ডোমেইন এবং একটি হোস্টিং হলে আপনি বিভিন্ন programming language (যেমন PHP, JavaScript,Python) ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন।
তবে, পিএইচপি ভাষায় ওয়েবসাইট খুলতে আপনাকে প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে না। ওয়ার্ডপ্রেস সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট বিল্ডারের মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি জিনিস লাগে, কত টাকা খরচ হয় এবং ওয়েবসাইট তৈরি এবং ব্লগিং থেকে টাকা উপার্জন সম্পর্কিত সবকিছুর গাইডলাইন আপনি আমাদের ওয়েবসাইটের ব্লগিং মেনু থেকে পেয়ে যাবেন।
ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
একটি ওয়েবসাইট থাকলে আপনি সে ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করতে পারবেন, অর্থাৎ Website khule Taka ay করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে যা এখন আলোচনা করবো। কিন্তু আপনার কাছে যদি কোনো ওয়েবসাইট না থাকে তাহলে প্রথমে আপনার একটি ওয়েবসাইট খোলা জরুরী।
তো, ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে আয় করা যায় চলুন দেখে নেওয়া যাক-
গুগল এডসেন্স থেকে আয়
আপনার কাছে একটি ওয়েবসাইট থাকলেই আপনি গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা আয় করতে পারবেন।
গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে এবং সে ওয়েবসাইটে নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করে যেতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত কন্টেন্ট পাবলিশ করা হয়ে গেলে এবং সাইটে কিছু সংখ্যক ভিজিটর থাকলে আপনি গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলে মনিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন, কন্টেন্ট এবং গুরুত্বপূর্ন পেইজ যেমন About Us, Contact Us, Privacy Policy ইত্যাদি ঠিকঠাক থাকলে এডসেন্স কতৃপক্ষ রিভিও করে আপনাকে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখানোর অনুমতি দিবে। এভাবেই আপনি গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট খুলে টাকা আয় করতে পারবেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
একটি ওয়েবসাইট দিয়ে টাকা আয় করার বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে আছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অন্যের পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে কমিশন নিয়ে আসার বিপণন পদ্ধতি।
আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি সে ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কম্পানির পণ্য যেমন Amazon, eBay, Daraz ইত্যাদি বিক্রি করে দিয়ে কমিশন পেতে পারেন।
মনে করুন, এমাজন কম্পানির একটি আইটেম Smart Watch নিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন কন্টেন্ট পাবলিশ করবেন। বিভিন্ন Smart Watch সম্পর্কে রিভিউ আর্টিকাল লিখবেন এবং সেখানে আপনার এফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে দিবেন। কেউ যদি উক্ত লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে আপনি সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা কমিশন পাবেন। এভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা আয় করা যায়।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে আয়
ওয়েবসাইট খুলে ই-কমার্স এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে হলে আপনাকে বিশাল পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কারন এর জন্য প্রথমেই আপনাকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুলতে হবে। আর আপনি হয়তো জেনে থাকবেন ই-কমার্স ব্যবসা করার জন্য বিশাল বিনিয়োগ করতে হয়।
আপনার কাছে যদি পর্যাপ্ত বাজেট থাকে তাহলে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুলে সেখানে আপনার বিভিন্ন পন্য বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটটি সবার প্রথমে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে এবং বেশি বেশি বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
ড্রপ শিপিং ব্যবসা করে আয়
ড্রপ শিপিং সারা বিশ্বে বহুল পরিচিত এবং বিপুল লাভজনক একটি ব্যবসা যেটি করতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে।
ড্রপ শিপিং ব্যাবসার আইডিয়াটি হলোঃ আপনি যেকোনো ড্রপশিপিং কম্পানির প্রোডাক্ট আপনার ওয়েবসাইটে সাজিয়ে রাখবেন। যদি কেউ আপনার ওয়েবসাইটে এসে প্রোডাক্ট ক্রয় করতে চায় তাহলে আপনাকে সে প্রোডাক্ট ডেলিবেরি দিতে হবে না বরং ড্রপশিপিং কম্পানিগুলো আপনার হয়ে ডেলিভেরি দিয়ে দিবে। এই ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে মূলত কিছুই করতে হবে না , সবকিছু ড্রপশিপিং কম্পানি করে দিবে আর আপনি মাঝখান থেকে টাকা গুনবেন।
স্পন্সর আর্টিকাল এর মাধ্যমে আয়
ওয়েবসাইট থেকে টাকা আয় করার জন্য একটি অভিনব পদ্ধতি হচ্ছে স্পন্সর আর্টিকাল। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সে ওয়েবসাইটে যদি ভালো ভিজিটর আনতে পারেন অর্থাৎ যদি আপনার ওয়েবসাইটকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন তাহলেই কাজ হয়ে গেল।
বিভিন্ন নামি দামি কম্পানি তাদের পণ্য সম্পর্কে আর্টিকাল লিখে আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে চাইবে, যাকে স্পন্সর আর্টিকাল বলে। আর এর বিনিময়ে আপনি দাবি করতে পারবেন মোটা অংকের টাকা।
সার্ভিস প্রোভাইড করে আয়
সার্ভিস প্রোভাইড, এটি আবার কি এবং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায়, এই প্রশ্নগুলো হয়তো আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
এখন বলি সার্ভিস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, web design service, SEO service, Content writing service, Marketing service, etc.
এরকম আরো হাজারো রকমের সার্ভিস আছে। ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিসের সম্পূর্ন তালিকা দেখে নিন। শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট খুলে বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং সার্ভিস প্রোভাইড করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করা যায়।
আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়গুলো আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভিস সেকশনে অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন কেউ আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে যদি আপনার সার্ভিস সম্পর্কে আগ্রহী হয় তাহলে আপনার সার্ভিস অর্ডার করবে। এভাবে আপনি ওয়েবসাইটে সার্ভিস প্রোভাইড করে টাকা আয় করতে পারবেন।
ই-বুক বিক্রি করে আয়
ই-বুক মানে হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বই যা ডিজিটাল আকারে প্রকাশ করা হয়। এগুলো কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে পড়া যায়। মানুষ এখন কাগজেই বই পড়া থেকে ই-বুক পড়াকে বেশি প্রাধান্য দেয় কারন এটি সস্তা এবং সহজবোধ্য।
তাই আপনি বিভিন্ন ই-বুক লিখতে পারেন এবং সেগুলো আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি যে বিষয়ে বেশি পারদর্শী এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সে বিষয়ে বই লিখতে হবে।
তাইলেই আপনার বইগুলো অনলাইনে আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
কোর্স বিক্রি করে আয়
এখানেও একই কথা, আপনি অনলাইনে যেকোনো বিষয়ে খুব পারদর্শী হতে হবে। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ের উপর বিভিন্ন ভিডিও কোর্স তৈরি করতে পারেন।
সেই কোর্সগুলো আপনার ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক করতে পারেন। যদি কেউ সে কোর্স করতে চায় তাহলে তাকে যেন টাকা দিয়ে Course Enrollment করতে হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
এভাবে আপনি একটি নতুন ওয়েবসাইট খুলে কোর্স বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারবেন।
নতুন একটি ওয়েবসাইট খোলার উপায়
এ পর্যায়ে আমরা ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায় তা দেখলাম। কিন্তু আপনি অবশ্যই জানতে চাইবেন যে একটি ওয়েবসাইট থেকে কত টাকা আয় করা যায় এবং নতুন ওয়েবসাইট খোলার উপায় কি।
Step 1: ওয়েবসাইটের একটি সুন্দর নাম বের করুন এবং সেটির ডোমেইন কিনুন।
Step 2: আপনার ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে লাইভ করানোর জন্য একটি হোস্টিং কিনুন। ডোমেইন হোস্টিং কেনার জন্য এই আর্টিকাল পড়ুন।
Step 3: আপনার ওয়েবসাইট বিল্ড করার জন্য একটি ওয়েবসাইট বিল্ডার ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করুন।
Step 4: ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করা হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইটের চাহিদা অনুযায়ী ওয়েবসাইটের কাঠামো বা ওয়ার্ডপ্রেস থিম ইন্সটল করুন।
Step 5: সর্বশেষ আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করার জন্য আপনাকে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন যুক্ত করতে হবে।
ব্যাস! এই কয়েকটি ধাপ অনুসরন করেই আপনি নিজে নিজে নতুন একটি ওয়েবসাইট খুলে ফেলতে পারবেন। এবং ওয়েবসাইট খুলে বিভিন্ন উপায়ে টাকা ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন।
নতুন অবস্থায় একটি ওয়েবসাইট খুলতে আপনার খরচ হতে পারে ২৫০০-৩০০০ টাকা।
আমাদের শেষ কথা
পাঠক এতক্ষন পড়ছিলেন ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায় সে সম্পর্কে। ওয়েবসাইট তৈরি এবং ওয়েবসাইট থেকে আয় করা নিয়ে যেকোনো প্রশ্ন কমেন্ট করে জানান,
আর যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে পোস্টটি শেয়ার করে রেখে দিন।