ইন্টারনেট কাকে বলে | Internet এর সকল অজানা তথ্য সমূহ

আজকের দিনে ইন্টারনেট চিনে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। কারন বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। অফিস আদালতের কাজ থেকে শুরু করে ব্যাবসা-বাণিজ্য, বাজার-সদাই লেখাপড়া, যোগাযোগ সব জায়গায় আমাদের ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না ইন্টারনেট কী এবং এই ইন্টারনেটের সঠিক সংজ্ঞা এবং ব্যবহার। তাই আজকের পর্যালোচনায় আমি আলোচনা করবো ইন্টারনেট কাকে বলে এবং এর কাজ কি এবং অজানা আরো অনেক তথ্য নিয়ে।

তো চলুন আজকের আলোচনা শুরু করি,

সূচিপত্রঃ

ইন্টারনেট মানে কী

মোবাইলের ডাটা কানেকশন কিংবা ওয়াইফাই চালু করে যেকোনো ব্রাউজার দিয়ে অনলাইনে যেকোনো কাজের সাথে জড়িত হওয়াকে আমরা ইন্টারনেট বুঝে থাকি।

কিন্তু আসলে এই ইন্টারনেট কি জিনিস? এর মানে কি?

ইন্টারনেট হলো সোজাকথায় নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকা। একটি কম্পিউটার তথা যেকোনো ডিভাইজ দিয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকাকেই ইন্টারনেটওয়ার্কিং বা ইন্টারনেট বলে।

ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি বিশ্বব্যাপি একটি নেটওয়ার্ক এবং পৃথিবীত সকল কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত হতে পারে।

READ MORE: ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা – কেন ওয়েবসাইট থাকা জরুরী?

প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট কাকে বলে

ইন্টারনেট হচ্ছে মূলত Interconnected network এর সংক্ষিপ্ত রূপ। একাধিক নেটওয়ার্ক একত্রিত হয়ে যে যোগাযোগ ব্যাবস্থাপনা গড়ে তুলে তাকেই ইন্টারনেট বলে।

ইন্টারনেট একটি বিশেষ গেটওয়ে যা বিশেষ রাউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো একে-অপরের সাথে সংযোগ করার মাধ্যমে গঠিত হয়। একে সংক্ষেপে নেট ও বলা হয়ে থাকে।

এটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক। কেননা, পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো ডিভাইজের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়া যায়।

অন্যভাবে বলতে গেলে, অনেক গুলো কম্পউটার এক সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় একটি নেটওয়ার্ক এবং একটি নেটওয়ার্কের সাথে আর একটি নেটওয়ার্ক যুক্ত করাই হলো ইন্টারনেট।

এটাকে আমরা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক ও বলতে পারি। তাছাড়া ইন্টারনেটকে ইন্টারনেটওয়ার্কিং ও বলা হয়ে থাকে।

ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অসংখ্য ডিভাইজ একটা আরেকটার সাথে যোগাযোগ করতে পারে, আর এভাবেই আমরা ঘরে বসেই পুরো বিশ্বকে পেয়ে যাই হাতের মুঠোয়।

ইন্টারনেট অর্থ কী

ইন্টারনেটের পূর্ণরূপ ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক ইংরেজীতে Interconnected network.

বাংলায় একে বলা হয়ে থাকে অন্তর্জাল

ইন্টারনেট (Internet) শব্দটি দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। ইন্টার (Inter) শব্দের অর্থ বুঝায় হচ্ছে ভেতরে এবং নেট (net) শব্দের অর্থ জাল।

অর্থাৎ, ইন্টারনেটের প্রধান অর্থ দাঁড়ায় অন্তর্জাল বা ভেতরের জাল।

তাছাড়া ইন্টারনেটের আরো অর্থ রয়েছে। সংক্ষেপে ইন্টারনেটকে Net বলে ডাকা হয়।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে

ইন্টারনেট কাকে বলে এটি আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি বা জানতে পেরেছি।

কিন্তু কখনো কি আপনার মনকে জিজ্ঞাসা করেছেন ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

আপনি হয়তো মনে করে থাকবেন ইন্টারনেট বোধহয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু আপনি মিথ্যা মনে করে আছেন।

পৃথিবীতে ৯৮% ইন্টারনেট যোগাযোগ হয় Optical Fiver এর মাধ্যমে।

কিন্তু কিভাবে?

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটারগুলো বা ডিভাইজগুলো নিজেদেরকে প্রথমত বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করে।

স্থানীয় নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের Local Tower.

তারপর?

স্থানীয় কম্পিউটারের এই নেটওয়ার্কগুলো পরবর্তীতে আরেকটি নেটওয়ার্কের সাহায্যে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয় এবং সেই নেটওয়ার্কটিই হলো ইন্টারনেট। এটি কাজ করে সমুদ্রের তলদেশে থাকা অপটিক্যাল-ফাইবার এর মাধ্যমে।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে বুঝিয়ে বলুন

ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে চলুন আপনাকে বুঝিয়ে বলি ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে,

আপনি যেই যে ডিভাইজটি দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতেছেন সেটি প্রথমে নিজস্ব মডেম বা LAN এর মাধ্যমে কোন একটি ISP (Internet Service Provider) বা ইন্টারনেটের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।

এখানে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ISP থেকে সেবা গ্রহন করে থাকে বিভিন্ন sim company বা Wi-fi Broadband company.

সেই ISP টি আবার বৃহত্তর কোন ISP এর সাথে সংযুক্ত হয়।

এখন প্রশ্ন আসে ISP আরেকটি বৃহত্তর ISP এর সাথে কিভাবে সংযুক্ত হয়।

এখানেই চলে আসে Optical Fiver এর কথা।

কোনো দেশের ISP গুলো অন্য দেশের কিংবা বৃহত্তর ISP এর সাথে ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন (Fiver Optic Backbone) এর সাথে সংযুক্ত থাকে।

অপটিকাল ফাইবার বা ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন হলো সরু স্বচ্ছ কাচের তার যা সমুদ্রের তল দেশ দিয়ে একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশকে সংযুক্ত করে।

প্রতিটি কম্পিউটার থেকে অগণিত তথ্য বা সিগ্নাল প্রতিনিয়ত এই অপ্টিকাল ফাইবার এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে প্রেরন হচ্ছে। এভাবেই তথ্য আদান-প্রধানের মাধ্যমে ইন্টারনেট কাজ করে থাকে।

আর এই তথ্য আদান প্রধান মুহূর্তের মধ্যেই চোখের পলকে ঘটে যায়।

এভাবেই মূলত ইন্টারনেট আপনার কম্পিউটার থেকে IPS, তারপর IPS থেকে বৃহত্তর IPS তারপর আবার অন্য কম্পিউটার বা সার্ভারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।

এভাবেই নেটওয়ার্কের তৈরি হয়। আর সারাবিশ্বব্যাপি ইন্টারনেটের প্রসার ঘটে। ইন্টারনেট মূলত এভাবেই কাজ করে। এভাবেই ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের জাল তৈরি করে রেখেছে সারা বিশ্বব্যাপি এবং পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়।

ইন্টারনেট সার্ভার কাকে বলে

আপনি ইতোমধ্যে জেনেছেন ইন্টারনেট কাকে বলে এবং ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে। ইন্টারনেট হলো মূলত একটি বিশেষ গেটওয়ে যার মাধ্যমে একটি কম্পিউটার অন্য আরেকটি কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে।

একটি কম্পিউটার থেকে অন্য আরেকটি কম্পিউটারের তথ্য আদান-প্রধানের মাধ্যমেই ইন্টারনেট কাজ করে থাকে।

এখন প্রশ্ন হলো ইন্টারনেট সার্ভার কাকে বলে?

ইন্টারনেট সার্ভার হলো একটি বিশেষ ধরনের কম্পিউটার যা শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। যখনই কোনো কম্পিউটারের কোনো তথ্য জানার দরকার হয় তখন ঐ সার্ভারকে Request করলে সার্ভার Response করার মাধ্যমে তথ্যটি প্রদর্শন করে।

যেমন, আমাদের ওয়েবসাইটটি একটি হোস্টিং সার্ভার এর মধ্যে রাখা হয়েছে। এখন কোনো কম্পিউটার যদি আমাদের সাইটের প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা লিখে সার্ভারকে Request করতে হবে।

এবং সার্ভার তার মধ্যে থাকে আমাদের ওয়েবসাইটটি আপনার মাঝে প্রদর্শন করবে। এরকম হাজার-হাজার লক্ষ-লক্ষ তথ্য বিভিন্ন সার্ভারের মধ্যে সংরক্ষন করে রাখা আছে।

যে কেউ চাইলেই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়ে সার্ভার রিকোয়েস্ট করতে পারে।

Arpanet কাকে বলে

১৯৬০ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা Advance Research Projects Agency বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল।

এই মানের ২ টি অংশ।

একটি হলো ARPA যেটি দ্বারা একটি সংস্থাকে বুজানো হয়। আর NET শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্বাল যেটি দ্বারা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা আরপা এর মধ্য এই যোগাযোগ সীমাবদ্ধ ছিল বলে তখন এর নাম ছিল আরপানেট।

কিন্তু যখন এটি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখন এর নাম দেওয়া হয় ইন্টারনেট ( Internet).

ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি

ইন্টারনেট অনেক প্রকারের হতে পারে।

সামগ্রিক অর্থে ইন্টারনেত ২ প্রকার। যথাঃ

  1. অনলাইন ইন্টারনেট
  2. অফলাইন ইন্টারনেট

কিন্তু ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে আবার ৬ প্রকারের ইন্টারনেট সম্পর্কে জানা যায়।

সেগুলো হলো 1. ডায়াল-আপ 2. DSL 3. স্যাটেলাইট 4. ক্যাবল 5. ওয়্যারলেস 6. সেলুলার

ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় কোন দেশে

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় লস এঞ্জেলেস এবং স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর মধ্যে প্রথম নেটওয়ার্ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

কাজেই আমরা বলতে পারি, সর্বপ্রথম ইন্টারনেট আবিষ্কৃত হয় যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকাতে। সর্বপ্রথম এই ইন্টারনেটের নাম ছিল আরপানেট (ARPANET)

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এর নাম ইন্টারনেট (Internet) রাখা হয়।

ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় কত সালে

১৯৬৯ সালের ১৪ই জানুয়ারি সর্বপ্রথম ইন্টারনেট আবিষ্কার করা হয়। আবিষ্কারের প্রথম দিকে এর নাম ছিল আরপানেট (ARPANET) কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭৪ সাথে একে ইন্টারনেট নামকরন করা হয়।

আসলে ইন্টারনেট তো আর এক দিনে আবিষ্কার করা হয়নি।

তাই সেই ভাবে নির্দিষ্ট করে ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার সময় উল্লেখ করা যায় না।

কিন্তু ধারনা করা হয় যে ২য় বিশ্বযুদ্ধ এর পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত কোল্ড ওয়ারের সময় ইউএসএ সম্ভাব্য যুদ্ধের পরিস্থিতিতে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন একেবারে ধ্বংস না হয়ে যায় সেই উদ্দেশ্যে টেলিগ্রাফ টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য একটা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরী করে।

এরা এটির নাম দেয় ‘MILNET‘.

সেটি পরবর্তীতে আরপানেট এবং ইন্টারনেটে পরিণত হয়েছে।

তবে ইন্টারনেটের মূল্য আবিষ্কার সাল ধরা হয় ১৯৬৯ সালকে।

কে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট আবিষ্কার করে

ইন্টারনেট এর আবিস্কারক বা জনক বলা হয় ভিনটন গ্রে কার্ফ (Vinton Gray Cerf) কে।

তবে প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটের আবিষ্কারক হলো Bob KahnVint Cerf

ভিনটন গ্রে কার্ফ ছিলেন টিসিপি/আইপি এর সহ-উদ্ভাবক। ডারপা (DARPA) তে কর্মরত অবস্থায় তিনি ইন্টারনেট তৈরিতে বিরাট ভূমিকা পালন করেন।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় কখন

পৃথিবীতে ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৬৯ সালের জানুয়ারী মাসে।

কিন্তু, বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহার চালু করা হয় ১৯৯৩ সালে শেষের দিকে।

এবং সর্বসাধারণের জন্য বাংলাদেশে এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৯৯৬ সালে।

১৯৯৩ এর শেষের দিকে স্থানীয় কিছু পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বুলেটিন বোর্ড সিস্টেম (BBS) নামক একটি পদ্ধতি চালুন করে।

এ পদ্ধতিতে তারা ডায়াল-আপ এর সাহায্যে ই-মেইল ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল।

কিন্তু সেখানে একটি সমস্যা ছিল যে ৫০০’শ এর অধিক ব্যবহারকারী ইমেইল ব্যবহার করার এই সুবিধা পেত না।

তারই ধারাবাহিকতায় এরপর ১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইল-এর মাধ্যমে প্রথম এদেশে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। এবং ১৯৯৬ সালে এর পূর্নতা পায়।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট স্থাপন করা হয়।

এবং ISN নামক একটি ISP-এর মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তার ঘটতে শুরু করে।

এখানে জেনে রাখা ভালো, ISP এর পূর্নরূপ হলো Internet Service Provider যার অর্থ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের অনলাইন ইন্টারনেটের চলন শুরু হলেও তখন এদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্য কম ছিল।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস

ইন্টারনেট কী এবং Internet কাকে বলে এবং এর কাজ কি কত প্রকার ইত্যাদি তথ্য আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন।

কিন্তু ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস জানেন?

আসলে, ১৯৫০ সালে ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের অগ্রগতির সাথে সাথে ইন্টারনেট আবিষ্কারের যাত্রা শুরু হয়।

কিন্তু যখন অর্পানেটের মাধ্যমে একটি বার্তা ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এ পাঠানো হয় তখন জনসাধারণের মধ্যে ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রথম ধারণা প্রবর্তিত হয়েছিল।

১৯৬০ সালের শেষ দিকে এবং ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক বা প্রোটোকল ব্যবহার করে অর্পানেটকে আরো উন্নত করা হয়।

১৯৮১ সালে যখন National Science Foundation (NSF) এবং  Computer Science Network (CSN) উন্নয়ন করে অর্পানেটের অ্যাক্সেসের জন্য একে আরো বেশি সম্প্রসারিত করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে “ইন্টারনেট” শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৯৯০ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা (আইএসপির) আবির্ভাব হতে থাকে। তখন থেকে সমুদ্রের তল দেশ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার তার বসানোর কাজ শুরু হয় এবং এক দেশের সাথে আরেক দেশের ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়।

এভাবে সারা বিশ্বে ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে পরে এবং আমরা ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেকদেশে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারি।

আজ ২০২১ সালে আমরা 5g Speed এ ইন্টারনেট চালাতে পারি।

হয়তো প্রযুক্তি আরো উন্নত হওয়ার সাথে এর আরো বেশি উন্নত হবে।

সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত

কতজন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে?

জানুয়ারী মাসে 2021 পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী 4.66 বিলিয়ন সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় 59.5 শতাংশ।

এই মোটের মধ্যে, 92.6 শতাংশ বা 4.32 বিলিয়ন Mobile Device এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত

বাংলাদেশে কতজন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে?

2021 সালে জানুয়ারী মাসে সারা বাংলাদেশে 47.61 মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, যা 2020 থেকে 7.7 মিলিয়ন বা 19% বৃদ্ধি পেয়েছে।

2021 সালের জানুয়ারিতে দেশে ইন্টারনেট প্রবেশ 28.8% ছিল

ইন্টারনেট ব্যবহার করলে কেন টাকা দিতে হয়?

আমরা সকলেই তো ইন্টারনেট ব্যবহার করি।

এই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে টাকা খরচ করে ডাটা কিনতে হয়।

কখনও কি মনে হয়েছে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে কেন টাকা দিতে হয়?

আসলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য কোনো টাকা খরচ হয় না।

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে বিনামূল্যেই তথ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরিত হয়।

তাহলে আমরা কেন ইন্টারনেটের পেছনে খরচ করি?

যে কম্পানিগুলো সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার ও সাবমেরিন ক্যাবল বসিয়ে রেখেছে তাদেরকে খরচ দেওয়া লাগে সাবমেরিন ক্যাবল এর খরচ এবং রক্ষনাবেক্ষন এর জন্য।

তারা যে ক্যাবল দিয়ে ইন্টারনেট তৈরি করেছে সে ক্যাবলের খরচ প্রতিনিয়তই মানুষের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে।

তাছাড়া, মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত ইন্টারনেটের টাকা দিয়ে এসব ক্যাবল নষ্ট হলে মেরামতের কাজ করে।

READ MORE:

ইন্টারনেটের সুবিধা

ইন্টারনেট আমাদের পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়।

দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে থাকি।

বলাই যায় যে, ইন্টারনেট ছাড়া চলে না আমাদের একটি মুহূর্ত। কারন এই ইন্টারনেটের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে।

নিচে কয়েকটির কথা উল্লেখ করা হলোঃ

যোগাযোগ

ইন্টারনেট আমাদেরকে খুব সহজে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে সরাসরি ভিডিও কলে যোগাযোগ করা যায়।

তাছাড়া, বিভিন্ন দেশের কনফারেন্স ও এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়।

যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সত্যিই ইন্টারনেট একটি অবিশ্বাস্য রূপ দিয়ে দিয়েছে।

ব্রাউজিং

ইন্টারনেট কে তথ্য ভান্ডার ও বলা হয়ে থাকে। কারন জানা-অজানা সকল তথ্য ইন্টারনেটে সংরক্ষিত রয়েছে।

যখনই কারো কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন পরে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে মুহূর্তের মধ্যেই সে তথ্যটি জেনে নিতে পারে।

বিনোদন

ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার আগে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম দিল টেলিভিশন। তখন মজাদার কোনো কিছু দেখার অন্য টেলিভিশনের দিকে চেয়ে অপেক্ষা করে বসে থাকতে হতো।

কিন্তু, ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর থেকে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের বিনোদন আমরা সার্চ করে বের করে নিতে পারি।

তাছাড়া, বিনোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার তো আছেই।

অনলাইন গেম

ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন গেম খেলা হতে পারে সময় কাটানোর একটি অন্যতম মাধ্যম।

এখন আমরা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়ে ঘরে বসে অনলাইন গেম খেলতে পারি, আরেকজনের স্কোর, প্রোফাইল এবং এক্টিভিটি দেখতে পারি।

এটি সময় কাটানো এবং সময়কে উপভোগ করার একটি মাধ্যম হতে পারে।

কিন্তু খেয়াল রাখবেন আপনি এবং আপনার সন্তান যেন অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে না যায়।

ভিডিও স্ট্রিমিং

বর্তমান ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় ভিডিও প্লাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউভ। আপনি যেকোনো ধরনের ভিডিও তৈরি করতে পারেন এবং ইউটিউবের মাধ্যমে তা ইন্টারনেটে দিয়ে রাখতে পারেন।

তাছাড়া, যেকোনো ভিডিও কিংবা ছায়াছবি অথবা নাটক দেখার প্রয়োজন হলে ইন্টারনেটে সার্চ করে তা দেখে আসতে পারেন।

এটি ইন্টারনেটের খুব উপকারী একটি সুবিধা।

READ MORE:

ইউটিউব ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করার উপায়

ভার্চুয়াল অফিস

বর্তমান যুগে চাকরী কিংবা অফিসের কাজ করার জন্য অফিসে যেতে হয় না। বরং ঘরে বসে যেকোনো অফিসের কাজ করা যায়।

এতে করে যাতায়াত খরচ এবং অফিসের খরচ বেচে যায়।

ই-কমার্স

বর্তনাম যুগে বাজারের দোকানের মতো ইন্টারনেটে রয়েছে হাজার হাজার ই-কমার্স ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন পণ্য আপনি ঘরে বসেই অর্ডার করতে পারেন।

এবং অর্ডার করে টাকা পরিশোধ করলে কম্পানি আপনার বাড়িতে আপনার অর্ডার করা পণ্যটি পৌছে দিয়ে যাবে।

এটি ইন্টারনেটের চরম একটি সুবিধা আপনি বলতে পারে।

Read More:

অনলাইন ইনকাম

ইন্টারনেট অনেক বেকার ছেলেপেলের জীবন বদলে দিয়েছে।

অনেক মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে টাকা উপার্জন করে।

তারা তাদের জীবীকা নির্বাহের পথ হিসেবে বেছে নেয় ইউটিউব, ব্লগিং, অনলাইন মার্কেটিং, ফ্রিলান্সিং, ইত্যাদি পেশাকে।

নতুনরা ফ্রিলান্সাররা ফাইবার এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয় করে। আবার ব্লগিং করেও টাকা আয় করা যায় প্রতি মাসে ভালো পরিমাণে।

ব্লগিং হলো আসলে ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করার মাধ্যম।

Conclusion

ইন্টারনেট কাকে বলে এবং ইন্টারনেটের বিষয়ে অনেক কিছুই আশা রাখি জানতে পেরেছেন। ইন্টারনেট না থাকলে আমাদের জীবনধারন করা বর্তমান যুগে অত্যন্ত কঠিন হয়ে যেত।

তাই আমাদের ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়াকে সন্মান দেখানো উচিত।

আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ হলো এই ইন্টারনেটের অপব্যবহার করবেন না। এবং বিভিন্ন ফাদ থেকে নিরাপদে থাকবেন।

আপনাদের আজকের প্রশ্ন হলো, ইন্টারনেটের গতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

নিচে কমেন্ট করে জানান, আর পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Avatar of Shakib Hasan

Blogger and SEO Expert. Founder of Techbdtricks. I always try to explore something new and let the people know about that. Keep me in your prayers.

Leave a Comment