আপনি কি মোবাইল দিয়ে অনলাইন থেকে আয় করার উপায় খুজছেন? অনেকের ধারনা অনলাইন ইনকাম করতে হলে লেপটপ কিংবা কম্পিউটার দরকার। কিন্তু এখন অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করা যাচ্ছে।
সেজন্য আপনার দরকার হবে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা। আজকের আর্টিকালে এমনই কিছু অনলাইন স্কিল এর কথা বলবো যেগুলোর মাধ্যমে ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে অনলাইন ইনকাম করা যাবে।
চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে স্মার্টফোন দিয়ে অনলাইন ইনকাম করার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করার উপায়
অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করার অনেক উপায় আছে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সতর্কতা অবলম্ভন করা উচিত। কেননা আপনি যেহেতু অনলাইনে কাজ করবেন সেহেতু আপনার ইনকাম ও অনলাইনেই গ্রহন করতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। তাই জেনে বুঝে সঠিক যায়গায় মোবাইল দিয়ে অনলাইন কাজ করে আয় করবেন। নিচে অনলাইন আয়ের কয়েকটি সঠিক উপায় সম্পর্কে বলা হলো যেগুলো মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই করা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং – Freelancing with Mobile
ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো অনলাইন মার্কেটপ্লেস সার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমে আয় করা। ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন ইনকাম বর্তমানে সময়ে খুব জনপ্রিয় একটি পেশা।
যাদের লেপটপ বা কম্পিউটার নাই তারা ছোট ছোট কাজ যেমন ডাটা এন্ট্রি, ট্রান্সলেশন, ভার্চুয়াল এসিসটেন্স হিসেবে কাজ করে অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করছে।
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অনেক কাজ রয়েছে যেমন ওয়েবসাইট তৈরি করা, ওয়েবসাইট ডেভেলোপ করা, আর্টিকাল লেখা, ওয়েবসাইটের এসইও করা, ভাষা ট্রান্সলেট করা, ভিডিও এডিট করা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি সহ আরো অনেক কিছু।
কিন্তু, সব কাজ আপনি মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন না। ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ বেছে নিতে হবে।
এর মধ্যে রয়েছে আর্টিকাল রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভাষা ট্রান্সলেট, ডাটা এন্ট্রি, ইত্যাদি।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসের হচ্ছে Freelancer, Upwork, Fiverr, people per hour, ইত্যাদি। আপনি সেখানে জয়েন করতে পারেন এবং অন্য মানুষদের সার্ভিস দিয়ে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে পারেন।
তবে, এর মধ্যে নতুনদের জন্য ফাইবার সবচেয়ে উপযোগী। কেননা, ফাইবারে যে কেউ চাইলেই জয়েন করতে পারে এবং তাদের সার্ভিসগুলো গিগ আকারে ডিসপ্লে করতে পারে।
ব্লগিং – মোবাইল দিয়ে ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম
ব্লগিং হচ্ছে নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করার একটি পেশা। মোবাইল দিয়ে ব্লগিং করে অনলাইন থেকে ইনকাম করা যায়।
মোবাইল দিয়ে ব্লগিং করতে হলে প্রথমে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। মোবাইলে ওয়েবসাইট তৈরি করা কঠিক কিছু নয়, বরং একটি ডোমেইন এবং একটি হোস্টিং হলেই ওয়ার্ডপ্রেস কিংবা ব্লগার দিয়ে ওয়েবসাইট বানিইয়ে নিতে পারবেন।
তারপর আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত মোবাইল দিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং করে একসময় গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল নিতে পারবেন এবং সেখানে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।
ব্লগিং এ অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করার অনেকগুলো উপায় আছে। তার মধ্যে গুগল এডসেন্স, এফিলিয়েট মার্কেটিং, নিজস্ব প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি, এসইও, ইত্যাদি অন্যতম।
ইউটিউব – মোবাইল দিয়ে ভিডিও তৈরি করে ইনকাম
ইউটিউব এর মধ্যে মোবাইল দিয়ে তৈরিকৃত ভিডিও আপলোড করে অনলাইন ইনকাম করা যায়। এর জন্য আপনার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর সময় দিতে হবে। প্রতিদিন নতুন-নতুন ভিডিও আপলোড করতে হবে। সেখানে প্রচুর পরিমানে ভিউ নিয়ে আস্তে হবে।
ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে হলে আপনাকে উপযুক্ত হতে হবে। যেমন আপনার ইউটিউব চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ-টাইম থাকতে হবে। তাহলেই আপনি ইউটিউবিং করে অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন।
মোবাইল দিয়ে ইউটিউব থেকে অনেক উপায়ে ইনকাম করা যায়। যেমনঃ গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে, এফিলিয়েট মার্কেটিং করে, নিজস্ব পণ্য বিক্রি করে, অন্যের পণ্যে প্রোমোশনাল ভিডিও পোস্ট করে, ইত্যাদি।
আপনি যদি মন দিয়ে ইউটিউব এ কাজ করতে পারেন, এবং অন্তত্য ১ মিলিয়ন সাভস্ক্রাইভার তৈরি করতে পারেন তাহলে শুধু মাত্র গুগল এডসেন্স থেকে আপনি প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম করতে পারবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া – মোবাইল দিয়ে ফেসবুক থেকে ইনকাম
ফেসবুক হলো একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া। আমাদের জীবনের অনেক অংশ আমরা এই ফেসবুকের পেছনে ব্যয় করি। কিন্তু, কেমন হয় যদি এই ফেসবুককে অনলাইন ইনকাম করার একটি ক্ষেত্র বানাতে পারি?
হ্যা, ঠিকই শুনেছেন। আপনার কাছে যদি একটি মোবাইল থাকে তাহলে সেই মোবাইলে ফেসবুক একাউন্ট খুলার মাধ্যমে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। ফেসবুক থেকে অনেকভাবে ইনকাম করা যায়, কিন্তু ফেসবুকে টাকা আয় করার ১৫ টি উপায় আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে।
ফেসবুক তার ব্যবহারকারীকে ব্যাবসা করার অধিকার দেয়। তাই আপনি চাইলে ফেসবুকে যেকোনো ধরনের ব্যাবসা করতে পারেন। তাছাড়া ফেসবুকে এড ম্যানেজমেন্ট করার মাধ্যমে অনলাইন ইনকাম করা যায়।
মোবাইল দিয়ে ফেসবুক থেকে ইনকাম করার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে, ফেসবুক পেইজ অথবা গ্রুপ বিক্রি করা। আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে একটি ফেসবুক পেইজ খুলতে পারেন। এবং সেখানে পর্যাপ্ত লাইক জমিয়ে তা বিক্রি করে দিতে পারেন। আর ফেসবুকে অটো লাইক নেওয়ার অনেক উপায় তো আছেই, আপনি ইচ্ছা করে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
রাইটিং – মোবাইলে লেখালেখি করে ইনকাম
কন্টেন্ট রাইটিং বা লেখালেখি করে অনেকভাবে ইনকাম করা যায়। প্রথমত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করে গুগল এডসেন্স থেকে আয় করা যায়। যেটি আমি এই ওয়েবসাইটে করছি।
দ্বিতীয়ত, টাকার বিনিময়ে লেখালেখি করে আয় করা যায়।
বর্তমান পৃথিবীতে কন্টেন্ট রাইটারের চাহিদা ব্যাপক। সাধারনত, ফাইবার মার্কেটপ্লেসে একজন সর্বোচ্চমানের লেখক ৫০০ শব্দের আর্টিকাল লিখে দেওয়ার জন্য ১০০ ডলার নিয়ে থাকে।
আপনি যদি খুব ভালো আর্টিকাল লিখতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে এটি আপনার ক্যারিয়ার হতে পারে।
আপনি নতুন অবস্থায়, মোবাইল দিয়ে শুরু করতে পারেন। এবং প্রতিটি আর্টিকাল লিখার জন্য ১০০ টাকা করে দাবি করতে পারেন। টাকা ইনকাম করা আপনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। বরং এই বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠা আপনার জন্য জরুরী।
যদিও লেখালেখি করে অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করা একটু কষ্টকর।
কিন্তু, আপনি যখন দক্ষ হয়ে যাবেন তখন, একটি আর্টিকাল লেখার জন্য ৩০০০ বা তারও বেশি দাবি করতে পারবেন।
[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য লেখালেখি করতে পারেন, প্রতি ২০০০ শব্দ লিখার জন্য আমরা আমাদের লেখকদের ৫০০ টাকা দিয়ে থাকি। কিন্তু, নতুনদের জন্য সেটা ১৫০ টাকা।]অনলাইন সার্ভে – মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন সার্ভে
অনলাইন সার্ভে, নামটি হয়তো আপনি প্রথমবার শুনেছেন। কিন্তু, বাংলাদেশের অনেক মানুষ মোবাইল দিয়ে সার্ভে করে প্রতিমাসে ২০-৩০ হাজার টাকা অনলাইন থেকে ইনকাম করছে।
অনলাইন সার্ভে করার জন্য আপনাকে একটি আইপি কিনতে হবে। এবং এই আইপি টি হতে হবে যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য কিংবা কানাডার।
তারপর ইন্টানেটে কিছু সার্ভে সাইট রয়েছে সেসকল সাইটে জয়েন হতে হবে। এবং, সেখানে আপনাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হবে এবং আপনাকে তার সঠিক উত্তর দিতে হবে। এর নামই মূলত সার্ভে (Survey)।
বিভিন্ন ইন্টারনেশনাল কম্পানি তাদের পণ্য এনালাইজ করার জন্য এই সার্ভে দিয়ে থাকে। যেমনঃ তাদের পণ্য কারা বেশি ব্যবহার করে, ছেলে নাকি মেয়ে, বয়স কত, তারা আর কি কি বিষয়ে আগ্রহী, এগুলো।
আপনি মোবাইল দিয়ে এধরনের সার্ভে সাইটগুলোতে জয়েন করে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অনলাইন ইনকাম করতে পারেন।
কিন্তু, বাংলাদেশের আইপি দিয়ে আপনি সার্ভে সাইটে জয়েন করতে পারবেন না, এর জন্য আপনাকে আমেরিকার আইপি কিনতে হবে, এবং আইপি কিনলে আপনাকে আমেরিকার একজনের ইনফরমেশ দিয়ে দেওয়া হইবে।
আপনাকে তার ইনফরমেশন ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ প্রশ্ন করলে আপনার নাম বলতে হবে David Johan. বাড়িঃ নিউইউর্ক এবং ইত্যাদি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং – মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে বুঝায় আপনি কোনো কম্পানির প্রোডাক্ট প্রচার করবেন এবং আপনার প্রচার করা প্রোডাক্ট যদি কেউ কিনে তাহলে সেখান থেকে আপনি কমিশন পাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য অনেক ওয়েবসাইটই রয়েছে। আপনি যদি চান তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট আমাজন এর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করতে পারবেন। এখানে প্রতিটি প্রোডাক্ট বিক্রি করে দেওয়ার জন্য আপনি সর্বোচ্চ শতকরা ১০% কমিশন পেয়ে যাবেন।
তাছাড়া অনেক মার্কেটপ্লেসে যেমন Envato market-এ ডিজিটাল প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস এর অ্যাফিলিয়েট করে মোবাইল দিয়ে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবেঃ
- একটি ডিভাইস( মোবাইল/ল্যাপটপ/কম্পিউটার),
- একটি ওয়েবসাইট
- যেকোনো অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট যা আমাজন সহ অনেক ওয়েবসাইট থেকে বাছাই করতে পারবেন।
মোবাইল দিয়ে অনলাইন ইনকাম করার অ্যাপস
আপনি চাইলে বিভিন্ন এপস থেকে ভিডিও দেখে কিংবা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেও মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
কিন্তু এটা ক্ষণস্থায়ী ইনকাম। কিছুদিন পর সেই এপটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমনকি আপনি বিশ্বস্ত অ্যাপস নাও পেতে পারেন। আপনি যে অ্যাপ এ কাজ করছেন সেই আপনার সাথে প্রতারণা ও করতে পারে।
এটা ফেসবুক ইউটিউব বা ব্লগের মত বিশ্বাসযোগ্য না। তাই, যদি আপনি বিভিন্ন অ্যাপ ইউজ করে সহজে টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে আপনি নিজ দায়িত্বে করবেন।
আমাদের শেষ কথা
তাহলে আমরা জানলাম মোবাইল দিয়ে অনেক উপায়ে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। কিন্তু অনলাইন আয়ের সকল কাজ মোবাইল দিয়ে করা যায় না। বরং, কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো মোবাইল দিয়ে করা যায় এবং ভালো পরিমানে টাকা ইনকাম করা যায়।
অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে করা একটু কষ্টকর হলেও যেহেতু আমরা এর মাধ্যমে টাকা রোজগার করতে পারছি সেহেতু অবশ্যই এটি আমাদের করা উচিত। যখন বেশি পরিমানে আয় করতে সক্ষম হবো তখন না হয় একটি কম্পিউটার কিনে নিয়ে কাজ করতে পারবো।