ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায় জানতে চাচ্ছেন? কিংবা ইউটিউব চ্যানেল থেকে মানুষ এত ইনকাম কিভাবে করে তা নিয়ে কৌতূহল জাগছে! জি পাঠক! আপনার এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমাদের আজকের আয়োজন।
আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাতে চলেছি কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করবেন সে বিষয়ে। তো পাঠক! আর দেরি না করে চলে যাচ্ছি মূল আলোচনায় :
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়:
ব্র্যান্ড চ্যানেল খুলতে হবে:
ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করতে হবে তা জানার আগে একটু বলে নেই কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয়। এটা মোটেই কোনো কঠিন কাজ নয়। এজন্য যা লাগবে তা হলো:
- ইউটিউবে সাইন ইন করতে হবে গুগল একাউন্ট দিয়ে।
- তারপরই চ্যানেল খোলার অপশন চলে আসবে।
- অপশন গুলো ধাপে ধাপে অনুসরণ করলেই আপনি সফল ভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন।
এই তো, হয়ে গেলো ইউটিউব চ্যানেল খোলা! সবসময় খেয়াল রাখবেন, এই যে চ্যানেলটি আপনি খুললেন এটা কিন্তু ব্যক্তিগত চ্যানেল না। এটা ব্রান্ড বা বিজনেস ক্যাটাগরির চ্যানেল। ব্রান্ড চ্যানেল খুলে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার জন্য আপনি যে সুবিধা পাবেন তা ব্যক্তিগত চ্যানেলে পাবেন না।
চ্যানেলকে করতে হবে আকর্ষণীয়:
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য চ্যানেলটিকে আবার যেনতেন করে রাখা যাবে না। উপস্থাপন করতে হবে বেশ নান্দনিকভাবে। চ্যানেলের প্রোফাইল এবং কভার ফটো হতে হবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আপনি যে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে চ্যানেল খুলেছেন, সে ধরনের ছবিই রাখতে হবে। অন্যথায় ভিউ বাড়বে না, ইউটিউব থেকে আয় করার ইচ্ছে ইচ্ছেই রয়ে যাবে।
চ্যানেলের বিষয়বস্তু হতে হবে জনপ্রিয়:
এই চ্যানেল থেকে আয় করতে হলে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আর তাহলো, চ্যানেলের নাম এবং বিষয়বস্তু খুব জনপ্রিয় হতে হবে। অর্থাৎ, যেসব বিষয়ে মানুষ বর্তমানে বেশি আগ্রহী সে বিষয় গুলো নিয়েই কাজ করতে হবে৷ বর্তমানে ইউটিউবে মানুষের আগ্রহের তালিকায় আছে এমন কিছু বিষয়ের তালিকা নিচে দেয়া হলো:
- টেকনোলজি
- গেমিং
- ভ্লগিং
- ফ্যাশন
- রান্না বান্না
- রূপচর্চা
- স্বাস্থ্য
- শিক্ষা
- ফানি ভিডিও।
চ্যানেল তো খোলা হলো। কি ধরনের বিষয় বেশি জনপ্রিয় তাও জানা হলো। কিন্তু এসব বিষয় ধারাবাহিক ভাবে চ্যানেলটিতে আপলোড দিলেই যে আপনি ইনকাম করতে পারবেন বিষয়টা মোটেও অত সহজ নয়। এখন আসি কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে ইনকাম করা যায় সে আলোচনায়।
যুক্ত হোন ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে:
ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে ইনকাম করার জন্য প্রথমেই আপনাকে যুক্ত হতে হবে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে। এই প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়াই আসলে ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে আয়ের মূল উৎস।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার শর্ত:
তবে আপনি চাইলেই এই পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারবেন না। সেজন্য আপনাকে যেতে হবে কিছু ধরাবাঁধা শর্তজালের মধ্য দিয়ে। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের সদস্য হতে আপনাকে যেসব শর্ত মানতে হবে তার একটা তালিকা আমরা দিয়ে দিচ্ছি:
- আপনার একটি এডসেন্স একাউন্ট থাকতে হবে।
- আপনি যে চ্যানেল থেকে আয় করতে চাচ্ছেন তার সাবস্ক্রাইবার নিদেনপক্ষে ১০০০ হতে হবে।
- এক বছরের ওয়াচ টাইম কমপক্ষে ৪০০০ ঘণ্টা হতে হবে।
- প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।
খুলতে হবে এডসেন্স একাউন্ট :
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য প্রথম শর্ত হলো এডসেন্স একাউন্ট খোলা। এই একাউন্টটি গুগলে খুলতে হয় স্বাভাবিক ভাবে। তবে আপনি যেহেতু ইনকাম করার জন্য ইউটিউবকে বেছে নিয়েছেন তাই আপনি ইউটিউবেই এই একাউন্ট টি খুলতে পারবেন।
এডসেন্স একাউন্ট খুলতে প্রাথমিক ভাবে যা লাগবে তা হলো:
- গুগল একাউন্ট।
- ফোন নম্বর, ঠিকানা।
- ব্যাংক একাউন্ট
- সাইটের সাথে এডসেন্সের সংযুক্তি।
এজন্য আপনাকে এখানে ক্লিক করতে হবে।
এখানে প্রবেশ করার পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কি কি করতে হবে। অর্থাৎ গুগুল একাউন্ট খোলার মতো ধাপে ধাপে সব তথ্য পেয়ে যাবেন। এই সব তথ্য সঠিকভাবে দেয়ার পর তাদের নীতিমালার সাথে ঐক্যমত্যে পৌঁছালেই আপনার ইউটিউব এডসেন্স একাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।
অপেক্ষা করুন মনিটাইজেশনের জন্য:
এডসেন্স একাউন্ট খোলা হয়ে গেলেই যে ইনকাম করতে পারবেন, বিষয়টা এমন না। এই একাউন্ট টি খোলার পর মনিটাইজেশনের আবেদন করতে হবে। এই আবেদন করার পর প্রায় এক মাস সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এই সময়ের মধ্যেই সাধারণত ইউটিউব এডসেন্স একাউন্ট মনিটাইজ হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো বেশ সময় লাগে। ইউটিউব মনিটাইজেশন কতৃর্পক্ষ বেশ ভালোভাবে যাচাই করে দেখে আবেদনকারীর প্রত্যেকটা বিষয়। তারপর সব মানদণ্ডে উতরে গেলেই মনিটাইজ করে দেয়।
এডসেন্স কতৃর্পক্ষকে তথ্য দিন:
মনিটাইজেশন পাওয়ার পরে এই একাউন্ট ব্যবহার করে ইউটিউব থেকে আয় করা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে এখনো বাকি কিছু কাজ। এই একাউন্টে যখন ন্যূনতম ১০ ডলার যোগ হবে তখন আপনি যে গুগল একাউন্ট দিলে এডসেন্স একাউন্ট খুলেছেন সেখানে একটা পিন পাঠানো হবে।
আপনাকে ৪ মাস পর্যন্ত সময় দেয়া আপনার লোকেশন জানানোর জন্য। এর মধ্যে যদি আপনি তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার এডসেন্স একাউন্ট টির কার্যকারিতা নষ্ট হবে। তাতে করে পুরো প্রসেসটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
সাধু-সাবধান!!!
তবে সাবধান! আপনার নামে যদি ইতিমধ্যে একটি এডসেন্স একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে আর একাউন্ট খুলতে যাবেন না যেন! এতে করে যে একাউন্টটি আছে সেটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে৷ একজন ব্যক্তি একটি একাউন্টই খুলতে পারবে। এই একাউন্টের মাধ্যমেই বিভিন্ন সাইট এবং চ্যানেল থেকে ইনকাম করতে পারবে।
ইউটিউব থেকে যে আয় হয় তার উৎস:
প্রিয় পাঠক, জানলেন তো কি উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করতে হয়। এখন নিশ্চয়ই কৌতূহল জাগছে যে ইউটিউব থেকে আয় করার যে অর্থ এটা আপনাকে কিসের ভিত্তিতে দেয়া হয়। জি পাঠক! এখন আমরা আপনাদের সে বিষয়েই জানিয়ে দিচ্ছি:
ইউটিউব মূলত একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নানা মানুষ ও বাঘা বাঘা সব প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রচার ও প্রসারের জন্য ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সে বিজ্ঞাপন থেকে ইউটিউব যা আয় করছে মূলত তার কিছুটা লভ্যাংশই আপনাকে দিচ্ছে। এভাবেই ইউটিউবাররা ইউটিউব থেকে আয় করে থাকেন।
প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে কত টাকায় কত শতাংশ লভ্যাংশ ইউটিউব আপনাকে দিচ্ছে। এটা জানতে হলে দুইটা টার্ম সম্পর্কে জানতে হবে। টার্ম দুটো হলো:
- সিপিএম বা কস্ট পার মাইলস
- আরপিএম বা রিভেনু পার মাইল।
সিপিএম হলো ইউটিউবের আয় করার পদ্ধতি। অর্থাৎ, ইউটিউব যে আপনাকে টাকা দিচ্ছে, সে কোথায় পাচ্ছে সেটার উৎস এই সিপিএম। বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের সেসব প্রচারণার জন্য তারা ইউটিউবকে অর্থ দিয়ে থাকে। প্রতি ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য ইউটিউব যা আয় করে তাই সিপিএম।
আরপিএম হলো আপনি যে টাকা আয় করছেন তার উৎস। মূলত, আপনি আপনার চ্যানেলে যে ভিডিও আপলোড করছেন, তাতে ইউটিউব কিছু বিজ্ঞাপন দেখায়। আপনার আপলোড করা ভিডিও তে প্রতি ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য ইউটিউব আপনাকে যে টাকা দিবে তা হলো আরপিএম। ইউটিউব সিপিএম থেকে ৪৫ শতাংশ নিজেদের অংশ হিসেবে রেখে বাকি ৫৫ শতাংশ আপনাকে দিবে। এই ৫৫ শতাংশই আপনার আয়, যা আরপিএম নামে পরিচিত।
শেষকথা:
তো পাঠক! আপনি যদি এই আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করতে হবে। এখন বেছে নিন নিজের পছন্দের বিষয় ; হয়ে যান সফল ইউটিউবার।
আরো পড়ুনঃ