যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং লেনদেন করে আসছেন তারা অনেকেই ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড চিনে থাকবেন। কিন্তু অনেক নতুন ব্যবহারকারী রয়েছে যাদের ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেও ডেবিট কার্ড কি সেটা জানেন না। আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন ডেবিট কার্ড কি, ডেবিট কার্ড কি কাজে লাগে বা ডেবিট কার্ড খোলার নিয়ম সম্পর্কে।
ডেবিট কার্ড কি
ডেবিট কার্ড কে অনেকে ব্যাংক কার্ড হিসেবে চিনে থাকবেন। আমরা যখন কোন ব্যাংকে একাউন্ট করে থাকি তখন আমাদের ব্যাংক একাউন্টে থাকা টাকা খরচ করার জন্য একটি এটিএম কার্ড দেওয়া হয়।আপনার ব্যাংক একাউন্টে যত টাকা থাকবে আপনি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সেই পরিমাণ টাকা খরচ করতে পারবেন।
অর্থাৎ আপনার নিজের একাউন্টে থাকা টাকা নিজেই খরচ করছেন ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে। ব্যাংক একাউন্টে টাকা না থাকলে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে কোন স্থানে পেমেন্ট করতে পারবেন না। ধরুন আপনার ব্যাংক একাউন্টে পঞ্চাশ হাজার টাকা রয়েছে আপনি চাইলে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এই ৫০ হাজার টাকায় খরচ করতে পারবেন।
ডেবিট কার্ড কি কাজে লাগে
ডেবিট কার্ড হচ্ছে এক ধরনের প্লাস্টিক ব্যাংক কার্ড। ডেবিট কার্ড ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে।নিচে ডেবিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কি কি কাজে লাগে তা উল্লেখ করা হলো:-
১.কেনাকাটার কাজে লাগেঃ ডেবিট কার্ড এর মাধ্যমে খুব সহজেই কেনাকাটা সম্পূর্ণ করা যায়।ধরুন আপনি কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন যেমন ঢাকা অথবা সিলেটে। সেখান থেকে ভালো একটি মার্কেটে ঢুকে কেনাকাটা করবেন বলে ভাবছেন তাহলে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।এতে করে পণ্য কেনার পর খুবই নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পেমেন্ট করা যায়।
২.নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ডঃ ডেবিট কার্ড নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ধরুন আপনাকে ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করার জন্য মাঝেমধ্যে ঢাকার বাইরে যেতে হয় এক্ষেত্রে আপনার যদি ডেবিট কার্ড না থেকে থাকে তাহলে নগদ অর্থ বহন করে নিয়ে যেতে হবে।যেহেতু আপনি অনেক দূরে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী কাজের জন্য তাই অনেক পরিমাণে নগদ অর্থ নিয়ে যাওয়া অনেকটা ঝুঁকি থাকে। আপনার যদি ডেবিট কার্ড করা থাকে তাহলে খুব সহজেই নগদ অর্থ না নিয়ে এই ডেবিট কার্ডটি নিয়েই যাওয়া যায়। পরবর্তীতে ডেবিট কার্ডে থাকা টাকা যেকোনো এটিএম বুথ থেকে তুলে নেওয়া যায়। যার ফলে টাকা ছিনতাই হওয়ার বা হারিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৩.অতিরিক্ত বাৎসরিক প্রদান করতে হয় নাঃ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হলে যেমন অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হয় বা অতিরিক্ত বাৎসরিক চার্জ দিতে হয় ডেবিট কার্ডের এই ঝামেলা নেই। নির্দিষ্ট কিছু পরিমাণ ফি প্রদান করার মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ড নিয়ে ব্যবহার করা যায়।
৪.লেনদেন করা খুবই সহজঃডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন থেকে শুরু করে অফলাইনে বড় প্রতিষ্ঠানে আপনারা লেনদেন করতে পারবেন। তাছাড়া সম্পূর্ণ ফ্রিতে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে।যা সাধারণত লেনদেনকে আরো অনেক সহজ করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম
ডেবিট কার্ড খোলার নিয়ম
বর্তমান সময়ে একটি ডেবিট কার্ড থাকা খুবই প্রয়োজন। তাছাড়া ডেবিট কার্ড খোলার নিয়ম বা শর্তাবলী এখন অনেক সহজ করা হয়েছে।ডেবিট কার্ড খোলার জন্য আপনার নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে এবং পাসবুক হাতে পেয়ে গেলে ডেবিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে। ডেবিট কার্ডের জন্য আবেদন করার পর ডেবিট কার্ডের একটি ফর্ম দেওয়া হবে।ফর্মটিতে আপনার নাম, ঠিকানা বাবার নাম সহ যে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাইবে সেগুলো পূরণ করে ফেলতে হবে।উক্ত ফর্মটি পূরণ করা হয়ে গেলে ব্যাংক অফিসার কে জমা দিতে হবে ।জমা দেওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনার ডেবিট কার্ডটি রেডি হয়ে যাবে এবং আপনি চাইলে ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ডটি নিয়ে নিতে পারেন।
ডেবিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
ডেবিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা বা ডেবিট কার্ড করতে কি কি লাগে এই বিষয়ে অবশ্যই অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে অনেক ধরনের রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করতে হলেও ডেবিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে এই অসুবিধাগুলো পোহাতে হয় না। আপনি যখন কোন ব্যাংকে একাউন্ট করছেন তখনই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট নিয়ে নিচ্ছে। তাই আপনি চাইলে ব্যাংক একাউন্ট হয়ে যাওয়ার পরপরই ব্যাংকে ডেবিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শুধুমাত্র ডেবিট কার্ডের জন্য প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি চার্জ আপনাকে বহন করা লাগবে।
ডেবিট কার্ডের বাৎসরিক চার্জ
ডেফিট কার্ডের বাৎসরিক চার্জ কত বা ডেভিড কার্ডের জন্য কত টাকা প্রতি বছর ফি প্রদান করতে হয় এটা সম্পর্কে অবশ্যই জানা জরুরি। ডেফিট কার্ডের ফি ব্যাংক ভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে আমি ব্যাংক এশিয়া ডেবিট কার্ড ব্যবহার করছি এটার জন্য আমাকে প্রতি বছর বাৎসরিক ফি দিতে হয় ৩৪৫ টাকা। আপনি যে ব্যাংকের ডেবিট কার্ড করবেন সেখান থেকেই জেনে নিতে পারবেন যে আপনার ডেবিট কার্ডের বাৎসরিক চার্জ কত নেওয়া হবে।
ডেবিট কার্ড একটিভ করার নিয়ম
বেশিরভাগ ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে আপনারা শুধুমাত্র বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন সম্পূর্ণ করতে পারবেন। ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ড আবেদন করার পর ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে কার্ডটি গ্রাহকের হাতে দেওয়া হয়ে থাকে।ডেবিট কার্ডটি গ্রাহকের হাতে দেওয়ার পরপরই কার্ডের যদি টাকা থাকে তাহলে সেটি একটিভ হয়ে যায়।তবে ডেবিট কার্ড থেকে যদি কোন এটিএম বুথের টাকা তুলতে হয় তাহলে পিন নম্বরের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর এই পিন নাম্বারটি যখন ডেবিট কার্ড হাতে পাবেন তখন ডেবিট কার্ডের খামের ভেতরে দেখতে পাবেন।
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা ডেবিট কার্ড কি বা ডেবিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও ডেবিট কার্ড সম্পর্কিত বিষয়ে যদি কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার মূল্যবান প্রশ্নটির খুবই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তর প্রদান করা হবে। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ