আপনার কাছে যদি অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন থেকে থাকে তাহলে গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার জেনে রাখা উচিত। কারন যে কোনো সময় এটি কাজে লাগতে পারে। যেমন আপনি পথঘাট হারিয়ে ফেললে কিংবা নতুন যায়গায় যেতে চাইলে Google Maps ব্যবহার করে সহজেই সমাধান পেতে পারেন।
তাই আজকের আর্টিকালে এমনই কিছু গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার সম্পর্কে জানবো যা আপনার বিপদের বন্ধু হবে।
কয়েকবছর আগেও অচেনা কোনো যায়গায় যেতে চাইলে মানুষ-জনকে জিজ্ঞাসা করে পথঘাট চিনে নিয়ে তারপর রওনা দিতে হতো। কিন্তু গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে এখন এ সমস্যাগুলো মিটে গেছে।
এখন পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপান্তে যেতে চাইলেও কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না। স্মার্টফোনের মাধ্যমে গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার করে খুব সহজেই লোকেশন ম্যাপ, রাস্তার ম্যাপ ইত্যাদি বের করে ফেলা যায়।
বলা যায়, Google Maps applicatioin-এর কল্যাণে পৃথিবীর কোন জায়গায়ই এখন আর অচেনা নেই!
আমরা যেখানেই যেতে চাই, গুগল ম্যাপে সার্চ করলেই সাথে সাথে পথ বের করে আমাদের সামনে হাজির করে দেয়। তাছাড়া কীভাবে যেতে হবে, সামনে যানজট আছে কিনা, যেতে কতক্ষন সময় লাগবে, কিংবা আমি এখন কোথায় আছি ইত্যাদি সবকিছু দেখিয়ে দেয়।
Google Maps Bangladesh-এ অসম্ভব জনপ্রিয় একটি অ্যাপ্লিকেশান বটে। কিন্তু, ব্যবহারের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। কারন, আমরা অনেকেই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের নিয়ম জানি না।
তাই চলুন অসাধারন কিছু গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার, অর্থাৎ সঠিক জায়গার গুগল ম্যাপের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
৫ টি অসাধারন গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার
গুগল ম্যাপের অনেক ব্যবহার রয়েছে। তার মধ্যে চমৎকার ৫ টি ব্যবহার নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১. গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে যানজটের অবস্থা নির্ণয় -Real time traffic
কেমন হয় যদি ঘরে বসেই জেনে নেওয়া যায় যে বর্তমানে কোন রাস্তায় যানজট (Traffic Jam) রয়েছে আর বর্তমানে কোন রাস্তা ফাঁকা?
তাহলে অবশ্যই অনেক ভালো হতো। ঠিক বলেছি না?
হ্যা, সেই সুযোগ করে দিতেই Google Maps নিয়ে এসেছে Live Traffic Update ফিচারটি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ফিচারটি ২০০৭ সাল থেকেই ব্যবহার হয়েছে আসছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এটি চালু হয়েছে কিছুদিন হলো।
এই ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে গুগল ম্যাপ-এর মেনু বার থেকে ‘Real Time Traffic’-এ ক্লিক করতে হবে।
কিন্তু বর্তমানে আরো সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন আপনি Directions-এ গিয়ে কোথায় থেকে কোথায় যেতে চান তা সেট করে দিবেন। তারপর গুগল ম্যাপ আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দিবে এবং রাস্তায় বর্তমানে কেমন যানজট রয়েছে সে সম্পর্কে ধারনা দিবে।
হলুদ চিহ্নিত স্থানে তুলনামুলক কম এবং লাল চিহ্নিত স্থানে তুলনামুলক বেশি যানজট রয়েছে বলে বুঝে নিতে হবে।
বলা যায় এই ফিচারটি মানুষের কাছে গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার আরো বেশি জনপ্রিয় করে দিয়েছে। এটি অসাধারন একটি ফিচার যা আপনি ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন।
২. ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই গুগল ম্যাপ চালানো – Offline maps
মনে করুন আপনি একটি নতুন জায়গায় ঘুরতে বের হলেন, যেহেতু সেখানের রাস্তা-ঘাট আপনার কাছে অচেনা তাই সেখানে ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ পথ হারিয়ে ফেললেন! এমতাবস্থায় আপনার কাছে স্মার্টফোন থাকলেও দুর্বল নেটওয়ার্কের কারনে ইন্টারনেট কানেকশন করতে পারছেন না!
কি করবেন এই মুহূর্তে?
গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার জানা থাকলে আপনি এ যাত্রায় বেচে যেতে পারেন।
অচেনা কোনো যায়গায় ঘুরতে বের হলে আপনি আগে থেকেই সেই এলাকার ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখতে পারেন।
এতে করে আপনি পথ হারিয়ে গেলে এবং ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে আপনার গন্তব্য খুঁজে পেতে পারেন।
বাংলাদেশের ইন্টারনেটের যে কি অবস্থা তা আপনাদের অজানা নয়। তাই, কোথায় কোন জঙ্গনে বা পাহাড়-পর্বতে গিয়ে কোন সময় হঠাৎ করে কোথায় হারিয়ে যান তা বলা যায় না।
তাই, পরেরবার কোথাও বেড়াতে গেলে আপনি অবশ্যই আগে থেকে সেই এলাকার ম্যাপ লোকেশন ডাউনলোড করে নিবেন। ফলে আর কোথাও হারিয়ে যাবার ভয় থাকবে না।
এটি করার জন্য আপনি গুগল ম্যাপ থেকে Offline maps অপশনে গিয়ে Select your own map করে অফলাইন গুগল ম্যাপ ডাউনলোড করে নিবেন।
বিশেষ করে ঢাকায় গেলে ঢাকার রাস্তার ম্যাপ ডাউনলোড করে নিবেন, না হয় অচেনা অলি-গলিতে কখন হারিয়ে যাবেন বুঝবেনই না।
৩. গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে যেকোন জায়গার দূরত্ব পরিমাপ – measure distance google maps
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার কত কিলোমিটার? কিংবা আপনার বাসা থেকে ঢাকার দূরত্ব কত? স্কেল ব্যবহার করে এই দূরত্ব মাপতে গেলে আপনাকে আলাদিনের চেরাগ খুঁজে বের করতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে হাজার বছর।
কিন্তু কঠিন শোনালেও আপনি চাইলে গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার করে নিমেষেই বের করে ফেলতে পারেন যেকোনো জায়গার দূরত্ব।
এর জন্য আপনার গুগল ম্যাপ এর যথাযথ ব্যবহার জানতে হবে। গুগল ম্যাপ এর প্রবেশ করে Destination বাটনে ক্লিক করে দিতে হবে।
তারপর Starting Point এ টেকনাফ এবং Destination point এ তেতুলিয়া দিয়ে দিলেই গুগল আপনাকে টেকনাফ থেকে তুলিয়ার দূরত্ব মেপে দিবে।
শুধু তাই নয়, কিভাবে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া যেতে হবে, যেতে কতক্ষন লাগবে ইত্যাদি সবকিছু আপনার সামনে তুলে ধরবে।
এভাবে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে Starting Point এবং Destination point এ দুটি অবস্থান বসিয়ে খুব সহজেই যেকোনো জায়গার দূরত্ব পরিমাপ (measure distance) করে নিতে পারবেন।
মনে করুন, আপনি আপনার বাড়ি থেকে জাফলং এর দূরত্ব মাপতে চাচ্ছেন। তাহলে starting point-এ Home কিংবা গুগোল আমার বাড়ি কোথায় লিখে গুগলে সার্চ করে জায়গার নাম এবং Destination point-এ জাফলং বসিয়ে দিলেই আপনার বাড়ি থেকে জাফলং-এর দূরত্ব পেয়ে যাবেন।
৪. গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে লোকেশন শেয়ার – Location sharing google maps
কেমন হয় যদি গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার করে আপনার লোকেশন অন্যকে জানিয়ে দেওয়া যায়?
হ্যা, লোকেশন শেয়ারের মাধ্যমে আপনার বন্ধুকে জানিয়ে দিতে পারবেন আপনি এখন কোথায় রয়েছেন বা আপনার লোকেশন কোথায়।
গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে প্রতি মুহূর্তে জানিয়ে দিতে পারবো আমি এখন কোথায় আছি।
এই অসাধারন ফিচারটি চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাক্তি নিরাপত্তাসহ ব্যবহারকারীর আরো অনেক সুবিধা হয়েছে। কেউ যদি এখন সাক্ষাত করতে চায় তাহলে ১০ মিনিট সময় ব্যয় করে আর ঠিকানা বুঝাতে হয় না।
বরং, টুপ করে গুগল ম্যাপ থেকে লোকেশনটি শেয়ার করে ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠিয়ে দিলেই হয়।
তাছাড়া, বন্ধুরা অনেকসময় বিশ্বাস না গেলে বর্তমান লোকেশন শেয়ার করে তাদেরকে বিশ্বাস করানো যেতে পারে। মোটকথা গুগল ম্যাপ এর এই চমৎকার ব্যবহারটি খুবই প্রয়োজনীয় এবং সময় উপযোগী।
কিছুদিন আগে এক স্কুলছাত্র একা ঘুরতে গিয়ে ছেলেধরার হাতে পরেছিল। কিন্তু, তারা আস্তানায় পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই দেখে তাদের এখানে পুলিশ এসে গেছে!
খোজ নিয়ে জানা যায়, ছেলেটি সবসময় গুগল ম্যাপের সাহায্যে লোকেশন শেয়ার করে তার বাবাকে জানিয়ে রাখতো যে সে এখন কোথায় আছে।
এভাবে ছেলেটি গুগল ম্যাপ এর Location Sharing ফিচারটি ব্যাবহার করে ছেলেধরাদের হাত থেকে বেচে যায়।
এই ফিচারটি ব্যবহার করে জন্য গুগল ম্যাপস থেকে উপরে ডানপাশের আইকনে ক্লিক করে “Location Sharing” অপশনে যেতে হবে। তারপর আপনি তা কোথায় শেয়ার করতে চান সেখানে শেয়ার করে দিবেন। যেমনঃ Messenger, WhatsApp, contact, etc.
এভাবে গুগল ম্যাপ এর লোকেশন শেয়ারিং ফিচার ব্যবহার করে আপনি যাকে খুশি তাকে জানাতে পারবেন আপনি এখন কোথায় আছেন।
৫. গুগল ম্যাপে নিজের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যুক্ত করা
যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক তারা গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার করে আপনার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যুক্ত করে দিতে পারবেন। এতে করে আপনার ব্যবসায় উন্নতি করতে পারবেন।
গুগল ম্যাপে বাড়ি, অফিস, দোকান ইত্যাদি যুক্ত করা যায়।
বর্তমানে কোনো মানুষ কোনো কিছু কিনতে চাইলে বা কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে তা সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে।
কিভাবে সেখানে যেতে হবে তার জন্য গুগল ম্যাপে সার্চ করে। তাই আপনি যদি, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান গুগল ম্যাপে যুক্ত করেন তাহলে এটি ব্র্যান্ডিং-এ সহায়তা করবে এবং আপনার কাস্টমার সহজেই আপনার প্রতিষ্ঠান খুজে পাবে।
গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার করে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান যুক্ত করার সুফলঃ
- সহজেই যেকেউ প্রতিষ্ঠানটি খুঁজে পাবে।
- আপনার সেবা সম্পর্কে ধারনা দিবে
- কাস্টমাররা আপনার কম্পানি সম্পর্কে রিভিউ দিতে পারবে। ভালো রিভিউ দিলে আরো বেশি কাস্টমার পাবেন।
- সকল ধরনের যোগাযোগের ঠিকানা এবং ওয়েবসাইট যুক্ত করতে পারবেন, ইত্যাদি।
Conclusion
আগামী পোস্টে আরো নতুন কয়েকটি গুগল ম্যাপ এর ব্যবহার নিয়ে কথা বলবো। আজ এই পর্যন্তই। আমাদের আজকের আর্টিকালটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে, তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
আর, গুগল ম্যাপ এর আরো অন্য কোনো ব্যবহার আপনার জানা থাকলে তাও পাঠকদের উদ্দেশ্য করে জানাতে পারেন। তা পরবর্তী আপনার নামসহ আমরা আমাদের এই পোস্টে যুক্ত করে দিব।
ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন আর টেক বিডি ট্রিকস এর সাথেই থাকবেন।
আরো আর্টিকাল পড়ুনঃ