আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে প্রথমে এই সেক্টরের কাজ সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বিভিন্ন ধরণের কাজ আছে। এর মধ্যে কিছু কাজ আছে যেগুলো থেকে খুব সহজই ইনকাম করা যায়। আবার কিছু কাজ আছে যেগুলো একটু কঠিন, একটু দক্ষতা প্রয়োজন, কিন্ত ক্যারিয়ারের জন্যে ভালো। এই আর্টিকেল থেকে আমরা শিখতে পারবো ফ্রিল্যান্সিং কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি, ক্যারিয়ার হিসেবে কোন কাজগুলো বেশি উপযোগী, কোন কাজগুলো সহজ, কোনগুলো কঠিন ইত্যাদি। (High demand freelance jobs)
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি – High Demand Freelance Jobs
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজগুলোর মধ্যে চাহিদা বেশি এবং অল্প সময়ের মাঝে অনেক টাকা ইনকাম করা যায়, এমন কিছু কাজ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
১। ওয়েব ডিজাইনার (Web Designer)
সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলোর একটি হল ওয়েব ডিজাইন। অনলাইনের যুগে প্রতিদিন হাজার হাজার ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে। আর এই ওয়েবসাইটগুলো ডিজাইন করার জন্য ওয়েব ডিজাইনারদের কে ভাড়া করা হয়। এখন প্রতিটা কোম্পানি অনলাইনে তাদের প্রচারের জন্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করে থাকে। এই ওয়েবসাইট তৈরির জন্যে তারা ওয়েব ডিজাইনারদের সাহায্য নিয়ে থাকে। আর এজন্যেই এখন ওয়েব ডিজাইন এর চাহিদা অনেক।
আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনে দক্ষ হতে পারেন তাহলে কাজের অভাব হবে না। খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে তার আগে আপনাকে অবশ্যই ওয়েব ডিজাইন এর উপর একটি কোর্স করে একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার হতে হবে।
২। গ্রাফিক ডিজাইন (Graphic Design)
ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ গুলোর একটি হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। প্রতিটি কোম্পানি ইন্টারনেটে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি তাদের ব্রান্ডের পরিচিতির জন্যে একটি লোগোর প্রয়োজন হয়। যে কোনো যায়গায় শুধুমাত্র লোগো দেখেই কোম্পানিকে চেনা সহজ হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা লোগো তৈরির মাধ্যমে কোম্পানির প্রচারণাকে অনেক সহজ করে দেয়।
লোগো তৈরি ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ আছে যেমন, বিজনেস কার্ড তৈরি, নিউজলেটার তৈরি, মার্কেটিং, এডভার্টাইজিং, রিপোর্ট, ক্যাটালগ ডিজাইন ইত্যাদি।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে হলে Photoshop ও Illustrator এই সফটওয়্যার দুটিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৩। অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট (App development)
অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট অনেক চাহিদা-সম্পন্ন একটি সেক্টর। বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়ের প্রচারণার জন্যে নিজস্ব অ্যাপস তৈরি করে থাকে। এজন্যে তাদের অ্যাপস ডেভেলপারদের হায়ার করার প্রয়োজন হয়। অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট এর কাজ শিখতে একটু সময় লাগে। ৬/৭ মাসের কোর্স করে দক্ষ ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আপনার কাজের অভাব হবে না।
৪। ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing)
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে অল্প সময়ে কাস্টমারের কাছে যে কোনো পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডকে আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কডইন, টুইটার ইত্যাদি প্লাটফর্ম গুলোতে আপনার পণ্যের উপর বেশি বেশি পোস্ট, কমেন্ট, শেয়ার, ভিডিও তৈরির মাধ্যমে পণ্যের পরিচিত বাড়াতে পারবেন। এটা পণ্যের বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করবে। এ কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং এখন খুব জনপ্রিয়। আপনি নিজে উদ্যোক্তা হয়ে থাকলে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবেও ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারেন। এর জন্যে খুব বেশি দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রয়োজন যোগাযোগ দক্ষতা।
- ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়
- ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য Linked In খুব গুরুত্বপূর্ন প্লাটফর্ম।
৫। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web Development)
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের খুবই ডিমান্ডেবল একটি কাজ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট যেখানে মূলত ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। এটি শিখতে হলে আপনাকে HTML এবং CSS সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। সরকারি ভাবে ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু আছে। আপনি বিনা খরচে ছয় মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।
৬। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট (Software Development)
আপনি যদি প্রোগ্রামিং ভালোবেসে থাকেন, তাহলে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আপনার জন্যে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান কাজ হলো সফটওয়্যার তৈরি করা। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাহায্যে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন সফটওয়্যার ডিজাইন করা হচ্ছে। কোম্পানিগুলোতে সফটওয়্যার ডেভেলপার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন অনেক বেশি।
এই সেক্টরে আসতে হলে আপনাকে সি-প্রোগ্রামিং, coding, testing, debugging ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ জ্ঞান থাকতে হবে। ১ বছরের একটি প্রশিক্ষণ নিতে পারলে আপনাকে আর পেছনে তাকাতে হবে না। কারণ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শেখা যতটা কঠিন, একবার শিখতে পারলে এখান থেকে আয় করা ততটাই সহজ।
৭। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
তরুণদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি কাজ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন যেটাকে সংক্ষেপে SEO বলা হয়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের প্রধান কাজ হলো যে কোনো ওয়েবসাইট বা পৃষ্ঠাকে গুগল সার্চ তালিকার প্রথমে নিয়ে আসা। এখন প্রত্যেকে চাই তার ওয়েবসাইট বা পেজ গুগলের প্রথমে থাকুক, তাই এস. ই. ও এর চাহিদাও অনেক। বিভিন্ন ব্লগ, ইউটিউব, ভিডিও ইত্যাদি থেকে এক মাসের মাঝেই আপনি এস. ই ও তে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন।
৮। ডাটা এনালাইসিস (Data Analysis)
ডাটা এনালাইসিস তুলনামূলক সহজ একটি কাজ এবং এটি শিখতে বেশি সময় লাগে না। অল্প সময়ে কাজ শিখে আপনি অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। ডাটা এনালাইসিস এর বিভিন্ন ধরণের কাজের মাঝে ডাটা এন্ট্রি ও লিড জেনারেশন বেশি জনপ্রিয় কারণ শুধু ওয়েব রিসার্চ ভালোভাবে করতে পারলেই এই কাজগুলো করা যায়।
তবে অফিস বা ব্যবসায়ের কাজের জন্যে ডাটা এনালাইসিস করতে হলে আপনাকে MS excel, SPSS, SQl ইত্যাদি সফটওয়ারগুলোর কাজ শিখতে হবে।
৯। কন্টেন্ট রাইটিং (Content Writing)
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে রাইটারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কেটপ্লেসে রাইটারদের লেখালেখির অনেক সুযোগ আছে যেমন, বিভিন্ন ধরণের ওয়েবসাইট, ব্লগ, বিজনেস প্রোফাইল, ভিডিও স্ক্রিপ্ট, অনলাইন নিউজপেপার, নিউজলেটার ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মগুলোতে নিয়মিত রাইটার চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। কন্টেন্ট রাইটিং কে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে, কিভাবে কপি-রাইটিং ফ্রি আর্টিকেল লেখা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপর কাজ শুরু করতে হবে।
১০। কাস্টমার সাপোর্ট (Customer Support)
প্রতিটা কোম্পানির কাস্টমার সাপোর্ট সেকশন-এ একজন এক্সপার্ট লাগে। মার্কেট-প্লেসগুলোতে কাস্টমার সাপোর্ট নিয়োগের অনেক বিজ্ঞাপন পাবেন। ইংরেজিতে কথা বলায় এক্সপার্ট হলে এবং কমিউনিকেশনের দক্ষতা থাকলে কাস্টমার সাপোর্টের এর জবটি আপনার জন্যে পারফেক্ট।
১১। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট (Virtual Assistant)
সাধারণ অবস্থায় একজন এসিস্ট্যান্ট এর যা কাজ, একজন ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট-এরও একই কাজ। পার্থক্য শুধু কাজটা অনলাইনে হবে। প্রয়োজন শুধু ইংরেজিতে দক্ষতা, কম্পিউটারের ব্যবহার জানা আর ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা থাকা। বিভিন্ন ধরণের এডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল ম্যানেজ করা, ব্লগ পোস্টিং, সেলস সাপোর্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কাজ করা যায় ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে।
নতুনদের জন্যে সহজ কিছু কাজ – Freelance Jobs for Beginners
নতুন ফ্রিল্যান্সাররা যদি ভালো ভাবে কাজ না শিখে প্রথম অবস্থাতেই ওয়েব ডিজাইন বা অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট এর মত কাজগুলো করতে যায়, তাহলে ব্যর্থ হবার সম্ভাবনাই বেশি। কোন কাজ দিয়ে শুরু করবেন এ ব্যাপারে যদি কনফিউজড হয়ে থাকেন, তাহলে নিচের তালিকা থেকে যে কোনো একটা কাজ বাছাই করতে পারেন। এ কাজগুলো শিখতে ১/২ সপ্তাহের মত সময় লাগবে। এরপরই আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
১। ডাটা এন্ট্রি;
২। লিড জেনারেশন;
৩। কপি এডিটর বা প্রুফ-রিডার;
৪। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট;
৫। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার।
ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হচ্ছে ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়। কারণ যে কোনো কাজে এক্সপার্ট হতে হলে আপনাকে ধৈর্য্য ধরে টিকে থাকতে হবে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর সব সেক্টরেরই অনেক চাহিদা রয়েছ। আপনার সময়, সুযোগ ও স্কিল অনুযায়ী যে কোনো কাজ দিয়ে শুরু করতে পারেন। এ ব্যাপারে আর কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানবেন।
পরিশেষে
পরিশেষে বলতে চাই আপনি যদি প্রকৃতপক্ষে ফিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি তাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিন। এমন যেন না হয় যে আপনি ফ্রিল্যান্স কাজ করার জন্য এমন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন ইন্টারনেশনাল মার্কেটে সে কাজের কোনো চাহিদা নাই।
আজকের পোস্টটি যদি আপনার কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর আপনার মতামত নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো অন্যান্য তথ্যঃ