কিডনি মানবশরীরের অত্যাবশ্যকীয় একটি অর্গান। সারাবছর এই কিনডির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। মূলত, আমাদের কিছু ভুলের কারনেই আমাদের কিডনি প্রতিনিয়ত ডেমেজ হচ্ছে। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলাচল করি, তাহলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অসুখ থেকে রক্ষা পেতে পারি। তো, আজকে এমনই কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো যেগুলো মেনে চললে আপনি কিডনির রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
কিডনির ক্ষতি হওয়ার কারনের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান কারণটি হলো পর্যাপ্ত পানি পান না করা। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে বৃক্কের মধ্যে রক্তপ্রবাহ কমে যায় ফলে কিডনি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা, রক্তপ্রবাহ কম হওয়ার কারণে কিডনিতে নাইট্রোজেন গঠিত বর্জ্য জমা হতে থাকে এবং পরবর্তীতে অনেক বর্জ্য জমা হয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না
অনেকসময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখলে শরীরের কিডনিসহ নানান সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণে পেশির ওপর চাপ থেকে ডাইভারটিকিউলোসিসের মতো জটিল রোগ হতে পারে। এছাড়া বেশিক্ষন প্রস্রাব আটকে রাখলে হাইড্রোনেফ্রোসিস হতে পারে। হাইড্রোনেফ্রোসিস হলো কিডনিতে প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা। এ সমস্ত সমস্যার ফলে পরবর্তীতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমাদের প্রস্রাব বেশিক্ষন আটকে রাখা উচিত নয়।
বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়
লবনের মধ্যে থাকে সোডিয়াম আর এই সোডিয়াম আমাদের শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। সোডিয়াম আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য হিসেবে বের করে দিতে ভুমিকা পালন করে কিডনি। আমরা যখন বেশি পরিমানে লবন খাই তখন এই লবন পরিপাকের জন্য কিডনির অতিরিক্ত বেশি কাজ করতে হয়। ফলে কিডনির উপর অনেক চাপ পরে।
তাই কিডনিকে চাপমুক্ত রাখতে সোডিয়াম জাতীয় খাবার বা লবণ পরিমানমতো গ্রহন করতে হবে । তা না হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যালকোহল থেক দুরে থাকা
অ্যালকোহলের মধ্যে নানা ধরনের টক্সিন থাকে। আর এসকল টক্সিন শরীর থেকে দূর করতে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায়। তাই, খুব বেশি পরিমাণে মদ পান করা বা অ্যালকোহল জাতীয় কিছু পান করা কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। মদ্যপানের অভ্যাস আছে এমন অনেকেরই অনেক সময় মাত্রাজ্ঞান থাকে না। মদ্যপানে শুধু কিডনিরই যে ক্ষতি হয় এমনটি নয়। মদ পান করলে কিডনিসহ অনেক অঙ্গ যেমন হার্ট, লিভার, যকৃত এবং আরো ইত্যাদি অঙ্গের ক্ষতি হয়।
তাই কিডনি বাঁচাতে হলে এবং সুষ্ঠভাবে জীবনযাপন করতে হলে অবশ্যই অ্যালকোহলে আসক্তি কমাতে হবে এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
ক্যাফেইনে বেশি আসক্ত হওয়া যাবে না
কফি, সফট-ডিংক বা কোমল পানীয়, চকলেট এমনকি কোল্ড-টিতেও ক্যাফেইন রয়েছে।তৃষ্ণা পেলে আমরা অনেক সময় সাধারন পানি না পান করে নানা ধরনের কোমল পানীয় পান করি যা একেবারেই উচিত নয়। কেননা এসব পানিতে মেশানো থাকে ক্যাফেইন যা অতিরিক্ত গ্রহনে আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং অতিরিক্ত রক্তচাপ আমাদের কিডনির উপর প্রভাব ফেলে এবং কিডনি ডেমেজও করে দেয়।
তাই কিডনিতে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের অতিরিক্ত ক্যাফেইন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যথানাশক ঔষধ থেকে দুরে থাকা
ব্যথানাশকের মধ্যেও কিছু পরিমান ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অপকারী। শরীর ব্যাথা করলেই ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়ার মতো বদঅভ্যাস আমাদের অনেকেরই রয়েছে । কিন্তু এসব ব্যাথানাশক ঔষধের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিডনিসহ শরীরের বেশ কয়েকটি অঙ্গের জন্য এই জাতীয় ঔষধগুলো ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন ব্যথানাশক ঔষধ সেবন কিডনির কার্যক্ষমা হ্রাস করে ফলে আমাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমাদের ব্যথা হলে ব্যথানাশক ঔষধ গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকা
লাল মাংস বা গরু-ছাগলের মাংস, মাছ, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি হচ্ছে প্রোটিন বা আমিষের উৎস । কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া উচিত। কেননা এসব খাবার কিডনির ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। তবে কিডনিতে কোনো সমস্যা না থাকলে এসব খাওয়া যেতে পারে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকা
ধূমপান কিডনিসহ শরীরে সব অঙ্গের জন্যই ক্ষতিকর। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণাতেই পাওয়া যায় যে ধূমপানের সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্ক আছে। ধুমপান কেবল যে নিজের ক্ষতিসাধন করে তেমনটি নয়। ধুমপান আপনার সন্তান সহ পরিবার বা পরিবেশের অনেক ক্ষতিসাধন করে। কিডনির সমস্যার থেকে এটি বেশি ফুসফুসের ক্ষতি করে থাকে।
তবুও যেহেতু ধুমপান মানবজীবনের জন্য অভিসাপস্বরূপ তাই সুস্থ কিডনি চাইলে আমাদের ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
রাত জেগে থাকা যাবে না
ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময়ই শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর টিস্যুর নবায়ন ঘটে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। কিন্তু রাত জেগে থাকা অথবা ঘুমাতে না পারা আমাদের অনেকেরই নিয়মিত সমস্যা বা একটা রোগ। ঘুমাতে না পারার সমস্যাটা নিয়মিত চলতে থাকলে কিডনিসহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম বা নার্ভাস সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। এতে কিডনিসহ অনেক অঙ্গ-প্রতঙ্গের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যায়।
তাই সুস্থ থাকতে হলে আমাদের নিয়মিত প্রর্যাপ্ত রাতে ঘুমাতে হবে।
সর্দি-কাশিকে পাত্তা দিতে হবে
সাধারণ সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া বা কেয়ার না করা অনেকেরই নিত্য নিয়মিত অভ্যাস। কিন্তু এইরকম কিছু ভুলের কারণে এই সর্দি-কাশিই কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। নানান গবেষণায় দেখা গেছে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেরই অসুস্থতার সময়ে ঠিকমতো বিশ্রাম না নেওয়ার ইতিহাস আছে। তাই সর্দি-কাশি হলে আমাদের যথাযথ চিকিৎসা করানো উচিত এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত।