বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবাই চায় ঘরে বসে ইনকাম করতে। মেয়েদের জন্যে ঘর সংসার সামলে চাকরি করা খুবই কষ্টকর। এজন্যে মেয়েরা এখন ঘরে বসে করা যায় এমন কাজের প্রতিই আকৃষ্ট হচ্ছে। ঘরে বসে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে তারা আত্মনির্ভরশীল হতে চায়। মেয়েদের ঘরে বসে ব্যবসা অর্থাৎ মহিলারা ঘরে বসে করতে পারে এমন ১০ ধরণের ব্যবসা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো
মেয়েদের ঘরে বসে ব্যবসা করার ১০ টি আইডিয়া
এক এক করে মহিলাদের জন্য ঘরে বসে ব্যবসা করার ১০ টি আইডিয়া জেনে নিন। ভালো করে চিন্তা করে দেখুন কোন ব্যবসাটি করলে আপনি তাড়াতাড়ি সফল হতে পারবেন, সেটি নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন।
১। অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা
অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা বর্তমানে মেয়েদের জন্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এজন্যে প্রথমে আপনাকে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে। আর সেখান থেকে লাইভে আপনে জামা কাপড়গুলো দেখাতে হবে। এরপর কাস্টমার কিনতে চাইলে সেগুলো তাদের ঠিকানায় ডেলিভারি দিতে হবে। শাড়ি, থ্রি পিস ইত্যাদি মহিলাদের সব ধরণের কাপড় বিক্রি করা যায়। এ ব্যবসায় প্রচুর লাভ হয়। আর যেহেতু আপনি অনলাইনে বিক্রি করছে তাই মূলধনও খুব বেশি লাগে না। পাঁচ হাজার টাকা দিয়েও আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
তবে আপনার যদি চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার বাজেট থাকে তাহলে আপনি একটা বুটিক হাউজ দিতে পারেন। বুটিক হাউজের পাশাপাশি অন-লাইন থেকেও বিক্রি হলে আপনি পুরো দোস্তর একজন ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পারবেন।
২। কুটির শিল্প
মহিলারা কুটির শিল্পের মূল ধারক ও বাহক। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই কুটির শিল্পের চাহিদা আজও একটুও কমেনি। ঘরে বসে বিভিন্ন ধরণের কুটির শিল্পের কাজ করা যায় যেমনঃ নকশি কাঁথা নকশি রুমাল, বেত ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিষ।
বিভিন্ন ধরণের কুটির শিল্পের মাঝে নকশি কাঁথার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এখন অনলাইনে নকশি কাঁথা বিক্রি হয়। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ডিজাইন ও নকশা ভেদে এক একটি নকশি কাঁথার দাম পাঁচশ টাকা শুরু হয়ে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। আপনি যদি সেলাইয়ের কাজ ভালো পারেন, তাহলে নকশি কাঁথা বিক্রি করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এছাড়া বেত ও বাঁশের তৈরি ফুলদানি, কলমদানি, ঢাকনা, ঝুড়ি, কুলা, ধামা ইত্যাদি জিনিষের ও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। হাটে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি এগুলো এখন অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে।
৩। অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং
ঘরে বসে ইনকাম করার সবচেয়ে সুবিধাজনক কাজ হলো অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করা। কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েভ ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কাজ আছে। তবে সবচেয়ে সহজ হলো কন্টেন্ট রাইটিং ও ডাটা এন্ট্রি। কম্পিউটার ব্যবহারের ব্যসিক জানা থাকলে যে কোনো মেয়েই এই কাজ করতে পারবে।
ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, শুধুমাত্র কাজ জানা থাকলেই আপনি মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে পারবেন। এজন্যে আপনাকে অতিরিক্ত মূলধন কিংবা জনবলের প্রয়োজন নেই।
জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মগুলোর নাম এখানে দেয়া হলোঃ
- Fiverr.com
- Upwork
- freelancer.com
- guru.com
- 99designs.com
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো পড়ুনঃ
- ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি
- ফাইবার কি? Fiverr এ কি কি কাজ পাওয়া যায়
- fiverr এ কাজ পাওয়ার উপায় কি
৪। ব্লগিং
মেয়েদের ঘরে বসে কাজ করার জন্যে ব্লগিং খুবই চমৎকার একটি আইডিয়া। এই মুহূর্তে যে লেখাটি আপনি পড়ছেন এটিও একটি ব্লগ। আপনি চাইলে অল্প কিছু টাকা ব্যয়ে খুব সহজেই এরকম ওয়েবসাইট ব্লগ বানিয়ে নিতে পারেন। এরপর আপনার পছন্দের বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করতে পারবেন। টেকনোলজি, ভ্রমণ, ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল, রেসিপি, খেলাধুলা ইত্যাদি যে কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন।
ব্লগে লেখা একটি ঝামেলাহীন কাজ। নিজের ইচ্ছে, সময় ও সুবিধামত কাজ করা যায়।
৫। অনলাইনে রান্না খাবার বিক্রি করে ব্যবসা
আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবসা হলো ঘরে তৈরি খাবার অনলাইনে বিক্রি করা। বেশির ভাগ মহিলারাই ভালো রান্না করতে পারেন। ফেসবুকে একটি পেজ খুলে আপনার বিভিন্ন রান্নার ছবিগুলো পোস্ট করে আজই শুরু করতে পারেন খাবারের ব্যবসা।
এছাড়া ফুড ডেলিভারি অ্যাপ যেমন ফুড পান্ডা এর সাথে কন্টাক্ট করেও খাবার বিক্রি করতে পারেন। এসব অ্যাপগুলোতে গ্রাহকরা খাবারের অর্ডার দিলে আপনাকে সেই খাবারটি রেডি করে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ফুড ডেলিভারি ম্যান এসে খাবার নিয়ে গ্রাহকের কাছে খাবার পৌঁছে দিবে। আর মাস শেষে অ্যাপ থেকে আপনি পেমেন্ট পেয়ে যাবেন।
৬। ক্রাফটিং
ক্রাফটিং হলো হাতে তৈরি বিভিন্ন রকমের জিনিস যেমনঃ কাগজের শোপিস, ফ্লোরাল জুয়েলারি, ছবির ফ্রেম, হ্যান্ড পেইন্ট করা শাড়ি, জামা ইত্যাদি। ক্রাফটিং তৈরির পূর্বে বাজারে কোন কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সে বিষয়ে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
বর্তমানে হ্যান্ড পেইন্ট করা শাড়ি, জামা, হাতে তৈরি ফ্লোরাল জুয়েলারির খুব চাহিদা রয়েছে। বিয়ে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এগুলো ব্যবহার করতে দেখা যায় মেয়েদের। পণ্য তৈরির সময় অবশ্যই এর গুণগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৭। ফ্যাশন ডিজাইনিং
মেয়েদের জন্যে সহজ ও লাভজনক আরেকটি ব্যবসা হলো ফ্যাশন ডিজাইনিং। ঘরে বসে খুব সহজেই আপনি জামা কাপড় ও গহনার ডিজাইন করতে পারবেন। ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে আপনার জন্যে আরো সহজ হবে। আর অভিজ্ঞতা না থাকলে এর উপর একটি কোর্স করে নিতে পারবেন। ফ্যাশন ডিজাইনিং একা না করে কয়েকজন মিলে করলে সবচেয়ে ভালো হয়। রুচিশীল ডিজাইন করতে পারলে অল্প সময়ে ব্যবসার পরিধি দ্রুত বাড়বে।
৮। ইউটিউব চ্যানেল থেকে ইনকাম
রান্নার রেসিপি থেকে শুরু করে যে কোনো প্রয়োজনে মানুষ এখন ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে থাকে। আপনার যদি একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকে, তাহলে ভিডিও বানিয়ে সহজেই সেখান থেকে ইনকাম করতে পারবেন। রান্নার রেসিপি, ক্রাফটিং, বিভিন্ন ধরণের শিক্ষামূলক ভিডিও ইত্যাদি যে কোনো বিষয় নিয়ে ভিডিও বানাতে পারেন।
তবে ভিডিও বানানোর পূর্বে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমনঃ
- কোন বিষয়ে ভিডিও বানাবেন তা নির্বাচন করার পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে বর্তমানে এর চাহিদা কেমন ও ভবিষ্যতে কেমন হতে পারে।
- সপ্তাহে অন্তত একটি ভিডিও আপলোড করতে হবে।
- দর্শকদের পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
- শিক্ষামূলক ভিডিও বানানোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিবেন। তাহলে মানুষ এতে উপকৃত হবে এবং আপনার চ্যানেলের প্রতি আগ্রহী হবে। ফলে আপনার চ্যানেলের লাইক, ভিউ ও সাবস্ক্রিপশন সবই বাড়বে।
৯। অনলাইনে শিক্ষকতা
বর্তমানে ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনার জন্যে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে থাকে। এজন্যে অনলাইনে পড়ানো এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া অনলাইনে কিছু প্লাটফর্ম আছে যেখানে রেজিস্ট্রেশন করে আপনি পড়াতে পারবেন। যেমনঃ টেন মিনিট স্কুল।
এছাড়া জুম অ্যাপ বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও ছাত্র ছাত্রীদের পড়াতে পারবেন। যেই সাবজেক্ট-এ আপনি অভিজ্ঞ সেটাতেই ক্লাস করাবেন। আপনার পড়া বোঝানোর দক্ষতা যদি ভালো থাকে, তাহলে দ্রুতই আপনার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। আপনার ক্লাসগুলো রেকর্ড করে ইউটিউব চ্যানেলেও দিতে পারেন।
১০।বিউটি পার্লারের ব্যবসা
সাজতে কে না পছন্দ করে। নারী মাত্রই সাজগোজের প্রতি প্রচুর আগ্রহী। আর এজন্যেই সবাই বিউটি পার্লারকেই বেছে নেয়। একারণেই বিউটি পার্লারের ব্যবসা এখন খুব লাভজনক ব্যবসা। এ কাজে পুঁজি যেমন বেশি লাগে তেমনি লাভও অনেক বেশি হয়। আপনার পুঁজি যদি বেশি হয় তাহলে বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
উপরের আলোচনা থেকে এতক্ষণে নিশ্চয় একটা ধারণা পেয়েছেন ঘরে বসে মেয়েরা কি কি কাজ করতে পারে। আপনার দক্ষতা, সময় ও সুযোগ অনুযায়ী যে কাজ করলে সুবিধা হবে, সেটা দিয়েই শুরু করবেন। এছাড়া ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়ালের সাহায্য নিতে পারেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
পরিশেষে
মেয়েদের ঘরে বসে ব্যবসা করা সহজ। আপনি যদি একজন মেয়ে মানুষ হয়ে থাকেন এবং ঘরে বসে ব্যবসা করে সাবলম্বী হতে চান তাহলে উপরে বর্নীত যেকোনো একটি ব্যবসার আইডিয়া কাজে লাগান। এখানে উল্লিখিত সবগুলো ব্যবসারই বর্তমানে চাহিদা রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এদের চাহিদা থাকবে।