অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম 2024

বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এই জন্যে এখানকার বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে অর্থের অভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। টাকার জন্যে যেন কোন ছাত্র ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ না হয় এই বিষয়কে মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র্ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে উপবৃত্তির ব্যবস্থা চালু করেছে। উপবৃত্তির আবেদনের জন্যে একটা সময় অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। কিন্ত এখন অনলাইনেই আবেদন করা যায়। এই আর্টিকেলে আমরা অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিবো। 

উপবৃত্তি কী?

অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল বা দারিদ্র্য শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকার থেকে যে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়, তাকে উপবৃত্তি বলে। পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও যারা শুধুমাত্র অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না সরকার তাদের খরচ বহন করে। বাংলাদেশ সরকারের উপবৃত্তি চালু করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করা। শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে উপবৃত্তি কর্মসূচীর একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট

অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম 

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল-কলেজের উপবৃত্তির জন্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ষষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তির জন্যে আবেদন করতে পারে। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেই ফরম পূরণের সময়সূচী সহ অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার জন্যে সম্পূর্ণ নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। এর সাথে সাথে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কারা উপবৃত্তির আওতায় পড়বে তাও জানিয়ে দেয়া হয়। 

ফরম পূরণের নিয়মাবলী জানা থাকলে একজন শিক্ষার্থী নিজেই শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করতে পারবে। তবে আবেদন করার সময় অবশ্যই আবেদনের সময়সীমা আছে কিনা এবং কত তারিখ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে এটা জেনে নিতে হবে। 

আবেদন শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়। এরপর বাছাই করা তথ্য সমূহ প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট পিএমইএটি (PMEAT) এর ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে উপবৃত্তির জন্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান অথবা www.pmeat.gov.bd এই লিংকে প্রবেশ করেও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে।

আরো পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার উপায়

অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদনের নিয়মাবলীঃ

শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্যে আবেদন ফরম পূরণের কিছু তথ্য চেয়ে নির্দেশনা দেয়া হয় । এই নির্দেশনা না মানলে আবেদন ফরম বাতিল বলে বিবেচিত হয়। উপবৃত্তির আবেদন ফরম এর সাথে যেসব তথ্য লাগবে তা হলো-

  • ছবিঃ শিক্ষার্থীর সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।  
  • স্বাক্ষরঃ শিক্ষার্থীর নিজের স্বাক্ষর লাগবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, স্বাক্ষর যেন সব সময় একই রকম হয়। কারণ স্বাক্ষর আবেদনপত্রের সাথে স্বাক্ষর না মিললে টাকা তোলার সময় ঝামেলা হবে । 
  • শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ শিক্ষার্থী কোন ক্লাসে অধ্যয়নরত আছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ লাগবে।    
  • জন্মসনদঃ জন্মসনদে ১৭ ডিজিটের একটি নম্বর থাকে। এই জন্মসনদ নম্বরটি লাগবে। যদি জন্মসনদ না থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশপত্রঃ ওই শিক্ষার্থী আসলেই দরিদ্র্ কিনা অর্থাৎ উপবৃত্তির যোগ্য কিনা তার প্রমাণস্বরুপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি সুপারিশপত্র লাগবে। 
  • অভিভাবক প্রত্যয়ন পত্রঃ আবেদনকারী শিক্ষার্থীর অভিভাবক যদি কোনো সরকারী চাকরির তৃতীয় বা চতুর্থ পদে কর্মরত থাকে, তাহলে তার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র লাগবে। 
  • পিতা/মাতা/অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরঃ শিক্ষার্থীর পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হবে। এক্ষেত্রে পিতা মাতার অনুপস্থিতে অন্য যে কোনো একজন অভিভাবক (ভাই/বোন/দাদা/দাদী/নানা/নানী ইত্যাদিও অভিভাবক হিসাবে ধরা যায়) এর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিলেও হবে। 
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরঃ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার জন্যে যে কোন বৈধ/সচল অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দিতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেতে সাধারণত বিকাশ বা নগদ নম্বর ব্যবহার করা হয়। আবার শিক্ষার্থী চাইলে পিতা বা মাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরও যুক্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে পিতা বা মাতার নিজ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর থাকতে হবে। 

উপরে উল্লিখিত আবেদন পত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্য গুলো প্রথমে প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দিতে হবে। সব তথ্য যদি সঠিক থাকে তাহলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এর ওয়েবসাইটে যেয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র একটি ফোন নম্বরই ব্যবহার করতে পারবে এবং একবারই আবেদন করতে পারবে । 

আরো পড়ুনঃ লেখালেখি করে আয় করার উপায়

উপবৃত্তি আবেদন অনলাইন ফরম

দারিদ্র্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে সরকারী উপবৃত্তির জন্যে আবেদন ফরম পূরণ করার জন্যে-

  • প্রথমে শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে উপবৃত্তির আবেদনের পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। 
  • চার পাতার এই ফরমটির সম্পূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। 
  • ফরম পূরণ কর শেষ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নিকট জমা দিতে হবে।
  • এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এই ফরমগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট পাঠাবেন। 

উপবৃত্তি সংক্রান্ত ফরম ডাউনলোড করুন

যেসব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আবেদন করতে পারবে

শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করে দরিদ্র্ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরই এ উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। সুতরাং উপবৃত্তির আবেদন করলেই সে পেয়ে যাবে বিষয়টা এতটা সহজ নয়। স্কুল-কলেজের ষষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই শুধুমাত্র এ উপবৃত্তির জন্যে আবেদন করতে পারবে। উপবৃত্তির জন্যে নির্বাচন করার পূর্বে কিছু বিষয় দেখা হয়-

  • আবেদনকারী শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বাৎসরিক ইনকাম কত তা দেখা হয়। যদি বছরে তার আয় ১ লক্ষ টাকার নিচে হয় তবেই সে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্যথায় তার আবেদন বাতিল হবে। 
  • শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বিবেচনা করা হয়। মেট্রোপলিটন এলাকায় ০.০৫ শতাংশ অথবা এর বাইরে হলে ০.৭৫ শতাংশ জমি বা এর নিচে থাকলে সে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে।
  • আবেদনকারী যদি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উপবৃত্তি বা তার অভিভাবক যদি শিক্ষাভাতা নিয়ে থাকে তাহলে ঐ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
  • এছাড়াও শিক্ষার্থী যদি পঞ্চম শ্রেণী বা অষ্টম শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সরকারি বৃত্তি ট্যালেন্টপুল বা সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়, তবে ঐ শিক্ষার্থীও উপবৃত্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

সরকারি উপবৃত্তির জন্য সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচন করা হয়। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র্ পরিবারের হয়ে থাকে। আবেদনকারী শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবে কি না তা চার থেকে ছয় মাসের ভেতর জানতে পারে। যোগ্য বলে বিবেচিত হলে তাকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। উপবৃত্তি নিশ্চিত হলে তাকে আর পড়াশোনার জন্যে যদি বেতন দিতে হবে না।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে কোন গেম খেলে টাকা আয় করা যায়

উপবৃত্তির অর্থের পরিমাণ

বাংলাদেশে উপবৃত্তি চালু করা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০২ সাল থেকে। ওই সময় উপবৃত্তির জন্য প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর জন্যে ১০০ টাকা করে বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে হয়েছে। আবার, একই পরিবারে যদি দুইজন শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে দুইজনই সমান পরিমাণ টাকা পাবে। 

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য আট হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের তাই উপবৃত্তির সুবিধা গ্রহণ করে হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া উচিত। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়লে উপবৃত্তির সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেয়ে যাবেন। আপনার আশেপাশে উপবৃত্তির যোগ্য কোনো শিক্ষার্থী আছে কিনা খোজ নিয়ে দেখুন। তাকে সাহায্য করুন আবেদন করতে। নিজস্ব বিদ্যালয় বা নিকটস্থ কম্পিউটার দোকান থেকেও আবেদন করতে পারবেন। 

আরো পড়ুনঃ ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়

পরিশেষে

অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম এবং কিভাবে উপবৃত্তির আবেদন করতে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আপনাকে জানিয়েছি। এরপরও যদি উপবৃত্তি পাওয়ার উপায় সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন আপনার থেকে থাকে তাহলে নির্দ্বীধায় কমেন্ট করবেন।

Avatar of Shakib Hasan

Blogger and SEO Expert. Founder of Techbdtricks. I always try to explore something new and let the people know about that. Keep me in your prayers.

Leave a Comment