১০ টি ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা, সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী

বাংলাদেশে বেকারত্ব সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে নেই পর্যাপ্ত চাকরি। অন্যদিকে, ব্যবসার জন্যও নেই পর্যাপ্ত পুঁজি। একটি ব্যবসা থেকে যতটা উপার্জন সম্ভব তা বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি গুলো থেকে সম্ভব নয়। ব্যবসা মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলে। তাই বেকারত্ব ঘুচাতে ও স্বাবলম্বী হতে স্বল্প বিনিয়োগে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা করার উপযুক্ত ও বাস্তবধর্মী ১০টি ব্যবসা সম্পর্কে এই লেখাতে জানতে পারবেন।

১০ টি ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা

স্বল্প বিনিয়োগে ৩০ হাজার টাকা বা তার কম পুঁজিতে যে সকল ব্যবসা করতে পারবেন, সেই ব্যবসার গঠন, খরচ ও কার্যপদ্ধতি নিজে তুলে ধরা হলোঃ

(১) পাইকারি পন্যের ব্যবসা

বিভিন্ন পাইকারি মার্কেট থেকে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য সংগ্রহ করে, খুচরা দোকানে সরবরাহ করা একটি লাভজনক ব্যবসা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পণ্য হতে পারে। যেমন: শুকনা খাবার আইটেম (আটা, চাল, পাস্তা, নুডুলস, কাঁচা চিপস ইত্যাদি), মুদি দোকানের সামগ্রী, টি-শার্ট, কোম্পানি স্টক লট পন্য ইত্যাদি।

একাগ্রতা ও সততার সাথে এই সকল পণ্য পাইকারি বাজার থেকে ক্রয় করে নিজের লভ্যাংশ রেখে খুচরা দোকানে সরবরাহ করুন।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির পণ্য বাছাই করুন।
  • ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসার পুঁজি গঠন করে পন্য ক্রয়, পরিবহন, মার্কেটিং ও সরবরাহ পরিচালনা করুন।

(২) কাঁচা সবজির ব্যবসা

সবজির চাহিদা দেশের সর্বত্রই রয়েছে। আপনার স্থানীয় বাজারে ছোট পরিসরে একটি স্থানে পর্দা টানিয়ে কিছু সবজির ট্রে নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রথমে নিকটস্থ পাইকারি সবজির আরত থেকে সবজি সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিদিনের সবজি প্রতিদিন ক্রয় করে পরিবহনের মাধ্যমে চাহিদা সম্পন্ন এলাকায় নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। 

নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান না করে ভ্রাম্যমান ভাবে গ্রামে গ্রামে কিংবা শহরাঞ্চলের অলি-গলিতে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিক্রয় বেশি হয়।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • সবজির আরত থেকে কাঁচা সবজি ক্রয়ের জন্য পুঁজি ১৫-২০ হাজার টাকা।
  • সবজির পরিবহন ৩০০-৫০০ টাকা।
  • সবজি পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য খাচি, ট্রে, বস্তা, ব্যাগ ইত্যাদি।
  • ভ্রাম্যমান ভাবে ব্যবসা করতে চাইলে একটি ছোট ভ্যান।

৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা করার জন্য এটি অত্যন্ত উপযুক্ত।

(৩) রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসা

এই ব্যবসাটি পুরুষের চেয়ে গৃহিণী নারীদের জন্য বেশি উপযুক্ত। রেডিমেড কাপড়ের পাইকারি বাজার (ইসলামপুর বা অন্যান্য বাজার) থেকে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির চাহিদা সম্পন্ন কাপড় স্বল্পমূল্যে ক্রয় করা যায়। এগুলো নিজের বাড়িতে বসে আশেপাশের অন্যান্য নারী কিংবা শিশুদের কাছে বিক্রি করা যায়।

এছাড়াও পাইকারি রেডিমেড কাপড় নিয়ে নিজ এলাকার মার্কেটেও সরবরাহ করা যায়। ৩০ টাকার চেয়েও অনেক কম পুঁজিতে ব্যবসাটি শুরু করা যাবে।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • কাপড় ক্রয়-বিক্রয় ও দরদাম সম্পর্কে ধারণা।
  • পাইকারি মার্কেট থেকে কাপড় ক্রয়ের জন্য পুঁজি। (প্রাথমিকভাবে ৫-১০ হাজার টাকাও যথেষ্ট)। 

(৪) ডিম ও দেশি মুরগির ব্যবসা

ডিম ও দেশি মুরগির বাজার চাহিদা সর্বত্রই বেশি। বর্তমানে এগুলোর দাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি সরাসরি বিভিন্ন খামার থেকে ডিম ও দেশি মুরগি সংগ্রহ করলে কিছুটা কম মূল্যে পাবেন। ফলে মুদি দোকানী ও মুরগির দোকানীদের থেকে কম মূল্যে বিক্রি করেও লভ্যাংশ পাবেন। 

আপনি যদি ভ্রাম্যমান ভাবে ১-২ হাজার ডিম ও ২০টি দেশি মুরগি প্রতিদিন বিক্রি করতে পারেন, তাহলে দৈনিক ২ হাজার টাকার বেশি উপার্জন করতে পারবেন।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে: 

  • খামার থেকে ডিম ও দেশি মুরগি ক্রয়ের জন্য পুঁজি, ২০ হাজার টাকা।
  • নিজস্ব কোন গাড়ি না থাকলে, সারাদিন বিক্রির জন্য গাড়ি ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা। পরবর্তীতে ব্যবসার লাভ দিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত অটো ক্রয় করতে পারেন।

(৫) মোবাইল সার্ভিসিং

স্বল্প পুঁজিতে চাহিদা সম্পন্ন ব্যবসা গুলোর মধ্যে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান অন্যতম। ২০২৩ সালের ১ জুন, বাসস এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৮ কোটি মোবাইল ব্যবহৃত হচ্ছে। মোবাইলের সামান্য ত্রুটিতেই সার্ভিসিংয়ের প্রয়োজন হয়। 

এ ধরনের ব্যবসা শুরু করতে দেশের বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে মোবাইল সার্ভিসিং কোর্স করতে হবে। তারপর মাত্র ২৫-৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন নিজ এলাকার কোন বাজার প্রাঙ্গনে। দক্ষতার সাথে কাস্টমারকে সেবা প্রদান করলে দ্রুত ব্যবসার প্রসার হয়। একটি চলমান মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে মাসিক ৩০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করা যায়।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • মোবাইল সার্ভিসিং কোর্স, ৮-১০ হাজার টাকা।
  • বাজারে একটি ছোট দোকান ভাড়া, ২-৪ হাজার টাকায়।
  • মোবাইল রিপেয়ার করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম/ যন্ত্রপাতি, ১০ হাজার টাকা।
  • প্রাথমিকভাবে মোবাইল এর কিছু ছোট পার্টস, ২-৪ হাজার টাকা।
  • দোকানের অতি প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র (চেয়ার,টেবিল), ৪-৫ হাজাটার টাকা। 

পরবর্তীতে ব্যবসা থেকে ইনকাম হলে, অন্যান্য সরঞ্জাম ও পার্টস ক্রয় এবং দোকানের ডেকোরেশন করতে পারবেন।

(৬) ফলের দোকান বা মৌসুমী ফলের বিক্রি

ফলের ব্যবসা স্বল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা গুলোর একটি। স্থানীয় বাজারে ছোট পরিসরে দোকান দিয়ে কিংবা বিভিন্ন মৌসুমী ফল ভ্রাম্যমান ভাবে বিক্রি করা যায়। নির্দিষ্ট মৌসুমে ফলের বাজারদর কম থাকে। সেই সময় নিকটস্থ পাইকারি বাজার থেকে, পুঁজি অনুযায়ী স্বল্প পরিমান ফল নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। 

প্রথমে, ভ্রাম্যমান ভাবে ফল বিক্রি করে ৫-৭ হাজার টাকাতেও ব্যবসাটি শুরু করা যায়। তারপর পুঁজি গঠন হলে নিজের একটি দোকান নিয়ে বড় পরিসরে ব্যবসা করতে পারেন। ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসাটির পুঁজি নিয়ে শুরু করে প্রথম মাস থেকেই কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা আয় করা যায়।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • বিভিন্ন চাহিদা সম্পন্ন ফল। যেমন: আপেল, কমলা, মালটা, আনার ইত্যাদি ফল ১/২ খাচি করে আনা। পাইকারি বাজার থেকে ১০-১৫ হাজার টাকাতেই ৬-৮ প্রকার ফল আনা যায়।
  • ফল পরিবহনের যাতায়াত খরচ, প্রতিবার ৩০০-১০০০ টাকা।
  • বাজারে ছোট পরিসরের দোকান ভাড়া, ২ হাজার টাকা।
  • দোকানে ফল সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় ঝুড়ি বা ট্রে, ১ হাজার টাকা।

এই ব্যবসায় সৎ থাকলে দ্রুত সফলতা পাওয়া সম্ভব।

(৭) ফুলের দোকান

বর্তমানে প্রায় সকল বিয়ের অনুষ্ঠানে, উৎসব-আয়োজনে, বিভিন্ন দিবসে, স্কুল-কলেজের বা রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর প্রথা রয়েছে। দেশের সকল এলাকাতে চাহিদা সম্পন্ন ফুল পাওয়া যায় না। তাই আপনার এলাকায় একটি ফুলের দোকান দিয়ে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

এই ব্যবসার জন্য অবশ্যই চাহিদাসম্পন্ন ফুল বাছাই করতে হবে। সঠিক উৎস থেকে ফুল ক্রয় এবং সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ব্যবসায় সফলতা পাবেন। 

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • সঠিক উৎস থেকে চাহিদা সম্পন্ন ফুল, যেমন: গোলাপ, বেলি, রজনীগন্ধা, জবা ইত্যাদি। প্রতিদিনের ফুল প্রতিদিন আনতে হবে। দিনে ৮-১৫ হাজার টাকার ফুল (চাহিদা অনুযায়ী)।
  • বাজারের ছোট দোকান বা নিজের জায়গায় পর্দা দিয়ে তৈরি দোকান। 
  • ফুল সাজানোর সরঞ্জাম ও দোকানের সাধারণ ডেকোরেশন।

এই ব্যবসাতে ঝুঁকি বেশি। কারণ ফুল বিক্রি না হলে নেতিয়ে যায়। তবে ব্যবসা বুঝে উঠতে পারলে মাসে ৩০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

(৮) মৌমাছি চাষ 

৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা করার জন্য মৌমাছি পালন একটি লাভজনক আইডিয়া। বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মধুর চাহিদা ব্যাপক। আমাদের স্বাস্থ্য ও রূপচর্চায় মধু অনেক উপকারী। নিজের বাড়ির পাশে একটি ছোট জমি থাকলেই মৌমাছি পালন শুরু করা যায় স্বল্প পুঁজিতে। শুধু মধুই নয়, তৈরি করতে পারবেন মোম ও বিভিন্ন ঔষধ।

বর্তমানে মধু উৎপাদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মধুর বাজার মূল্য কমছে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও ব্যবসা করতে পারলে ৩০ হাজার টাকা পুঁজিতে মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

প্রাথমিকভাবে মৌমাছি পালনে প্রয়োজন হবে:

  • ছোট মৌমাছি সংগ্রহ/ক্রয়, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
  • মৌমাছির চাকের জন্য খাচা ক্রয়, ৮-১০ হাজার টাকা।

মৌমাছির চাক স্থাপনার আশেপাশে বিভিন্ন ফুল, যেমন: সরিষা, সূর্যমুখী, কালোজিরা, লিচু ইত্যাদি ফুল থাকলে উৎপাদন বেশি ও লাভজনক হবে।

(৯) ফুড কোর্ট 

বর্তমান সময়ে ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসার মধ্যে লাভজনক, চাহিদা সম্পন্ন ও স্মার্ট ব্যবসা হলো ফুড কোর্ট। অনেকেই একে ছোট পরিসরের ব্যবসা মনে করেন। তবে একজন সফল ফুড কোর্ট ব্যবসায়ীর মাসিক উপার্জন ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ফাস্ট ফুড ও মুখরোচক খাবার তৈরি করতে পারলে স্বাবলম্বী হতে পারবেন আপনিও। চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোল, টিক্কা, কাবাব, ফুচকা-চটপটি, বার্গার, ঝালমুড়ি ইত্যাদি খাবার নিয়েই হবে আপনার ব্যবসা। ছোট একটি ভ্রাম্যমান দোকানে এগুলো বিক্রি করতে পারেন। অথবা স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, বাজারেও স্ট্যান্ডবাই ফুড কোর্টেও ব্যবসা করতে পারেন।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • একটি ফুড ভ্যান (চলমান/ স্ট্যান্ডবাই) ১৮-২০ হাজার টাকা।
  • খাবার তৈরি ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ৩-৪ হাজার টাকা।
  • খাবারের কাঁচামাল ও মশলা, প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার টাকা।

(১০) চা ও কফির দোকান

স্বল্প পুঁজির ব্যবসা গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ভাবনা আসে চা ও কফির দোকানের কথা। ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। তবে বর্তমানে এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেশি, তাই টিকে থাকা কঠিন। অন্যদিকে, অধিকাংশ চায়ের দোকানে সিগারেট জাতীয় হারাম পন্য বিক্রয় করা হয়। 

তবে ভালো কোয়ালিটির চায়ের সাথে কফি, বিস্কুট, বাচ্চাদের খাবার আইটেম ইত্যাদি বিক্রি করতে পারেন। পরবর্তীতে পুঁজি বেশি হলে আকর্ষণীয় ডেকোরেশন করে কফিশপ এর ব্যবসাও করতে পারবেন।

ব্যবসার শুরুতে প্রয়োজন হবে:

  • ছোট পরিসরে একটি দোকান ভাড়া।
  • চা, কফি তৈরির ও বিক্রির জন্য সরঞ্জামাদি।
  • কাঁচামাল ইত্যাদি। 

শেষকথা 

৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা করার জন্য উপরোক্ত ব্যবসাগুলো সময়োপযোগী এবং বাস্তবধর্মী। এগুলোতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলে প্রতিমাসে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পুঁজি অনুযায়ী একটি ব্যবসা বেছে নিয়ে শুরু করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

Avatar of Shakib Hasan

Blogger and SEO Expert. Founder of Techbdtricks. I always try to explore something new and let the people know about that. Keep me in your prayers.

Leave a Comment