এসইও (SEO) শব্দটির সম্পূর্ন অর্থ হচ্ছে Search Engine Optimization. মূলত সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের প্রথমদিকে থাকার জন্য ওয়েবসাইটকে কিছু নিয়মানুসারে অপ্টিমাইজ করাকেই এসইও বলে। এই আর্টিকালে SEO কি এবং এর মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি আজকের আর্টিকালটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
শুরু করার আগে জেনে নিন- এসইও-এর কয়েকটি মৌলিক শব্দ।
এসইও কি?
এসইও শব্দটি একটি ইংরেজী শব্দ। ইংরেজীঃ SEO
SEO হচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। এবং এর পূর্নরূপ হচ্ছে Search Engine Optimization.
কোনো ওয়েব কন্টেন্ট (টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিও, ইত্যাদি)-কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম দিকে নিয়ে আসার জন্য এদেরকে যেভাবে বা যে নিয়মে অপ্টিমাইজ করা হয় তাহলে এসইও বলে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেক্টরে এসইও অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে আছে। এবং প্রতি বছর বড় বড় কম্পানিগুলো এসইও এর পেছনে অনেক টাকা খরচ করে শুধুমাত্র গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে প্রথমদিকে থাকার জন্য।
এখন, চলুন উদাহরন সহকারে এসইও এর কন্সেপ্টটি ক্লিয়ার করি।
এসইও বলতে কি বুঝায় – উদাহরণসহ
এসইও সম্পর্কে আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যদি একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করি।
ধরুন, আপনি একটি মোবাইল কিনতে চান।
মোবাইল কিনতে হলে প্রথমে আপনার কি করা উচিত?
অবশ্যই কোন মোবাইলটি ক্রয় করবেন প্রথমে তা বাছাই করা উচিত।
মোবাইল বাছাই করার পর কি করা উচিত?
বাছাই হয়ে গেলে বাজারে মোবাইলটির দাম কতো আছে তা জানা দরকার।
আপনি অবশ্যই মোবাইলের দাম জানার জন্য কিংবা কোন মোবাইলটি আপনার জন্য ভালো হবে তা জানার জন্য প্রথমেই মোবাইলের চলে যাবেন না।
বরং গুগলে সার্চ করে আগে মোবাইল সম্পর্কে জেনে নিবেন। ঠিক?
এখন, গুগলে “Best mobile in Bangladesh” লিখে সার্চ করার পর হাজার-হাজার পেইজ আপনাকে দেখাবে। আপনি কিন্তু সবগুলো পেইজে ক্লিক করবেন না। বড়জোর ৫-১০ টা আর্টিকাল পড়লেই আপনি বুঝে যাবেন কোন মোবাইলটি আপনার জন্য বেস্ট হবে।
এখানেই চলে আসে এসইও এর কথা। যে ওয়েবসাইটগুলো এসইও এর নিয়মানুসারে আর্টিকাল লিখেছে তাদের ওয়েবসাইট আগে পদর্শিত হবে। ফলে বেশি বেশি মানুষ তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে এবং এতে করে তারা বেশি লাভবান হবে।
প্রশ্ন আসতে পারে যে কিভাবে লাভবান হবে। তারা নিচের আর্টিকালগুলো পড়বেন-
এখন সহজ কথায় এসইও এর কথা বলতে গেলে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে প্রথম দিকে জায়গা করে নেওয়ার জন্য যেই নিয়মে কাজ করতে হয় তাকে এসইও বলে।
এসইও-এর গুরুত্ব
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে ২০২০ সালের দিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায় এসইও পরিষেবাগুলিতে প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।
এটি ২০১৬ কিংবা ২০১৮ এর চেয়ে অনেক বেশি।
একবার ভাবুন বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এসইও করার জন্য কেনো কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। এটি কি এমন একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। কেনো চারদিকে শুধু এসইও নিয়ে মানুষ পরে আছে।
আমি আপনাদের সাথে এসইও-এর ৩ টি গুরুত্ব শেয়ার করছি।
১। টার্গেটেড ট্রাফিক(Targeted Traffic)
এসইও তে ট্রাফিক বলতে ওয়েবসাইটে প্রবেশকৃত ভিজিটরদের বুঝানো হয়ে থাকে। এসইও করে সাইট রেংক করানো হলে সেখানে অনেক টার্গেটেড ট্রাফিক পাওয়া যায়। যেমনঃ
কেউ যদি “Best mobile in bangladesh” লিখে গুগলে সার্চ করে তাহলে গুগল শুধু মোবাইল সম্পর্কেই রেজাল্ট দেখাবে। সেখানে লেপটপ কিংবা অন্য কিছু দেখাবে না। কেউ এটি লিখে সার্চ করার মানে হলো সে একটি মোবাইল কিনতে চায়। আর আপনি যদি এই কি-ওয়ার্ডটির জন্য আপনার ওয়েবসাইটকে রেংক করাতে পারেন, তাহলে সেখানে যারা শুধুমাত্র মোবাইল কিনতে চায় তারাই ভিজিট করবে। এবং এখানে আপনার কাছ থেকে মোবাইল কিনে নেওয়ার চান্সও থেকে যায়।
তাই বলা হয়, এসইতে টার্গেটেড ট্রাফিক(Targeted Traffic) পাওয়া যায়।
২। উচ্চ রূপান্তর হার(High Conversion Rate)
উচ্চ রূপান্তর হার বা Conversion Rate বলতে বুঝায় আপনার ওয়েবসাইটে কতজন মানুষ প্রবেশ করলো এবং কতজন মানুষ আপনার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করলো এর অনুপাতকে। যেহেতু সাইটে এসইও করার ফলে টার্গেটেড ট্রাফিক পাওয়া যায়, তাই সেখানে পণ্য বিক্রি করার হার সবচেয়ে বেশি হয়।
যদি আপনার ওয়েবসাইটে ১০০ জন ভিজিটর আসে এবং সেখান থেকে ৫ জনে যেকোনো একটি প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে আপনার সাইটের Conversion Rate হলো ৫%। কিন্তু, এটি যে কেবল পণ্য বিক্রির সাথেই সংশ্লিষ্ট এমনটি নয়। বরং একটি ক্লিক, সাবস্ক্রাইভ কিংবা নোটিফিকেশন অন করাও একধরনের Conversion.
এসইও করার কারনে এই রেইটগুলো অনেক উচ্চমানের হয়ে থাকে।
৩। ব্যান্ডের মান বৃদ্ধি( Super Strong Band value)
এসইও যে কোনও সংস্থার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে সহায়তা করে। যদি কোনও ব্যক্তি গুগলে অনুসন্ধান করে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে ভালো কিছু পায় তবে সেই সংস্থার নামটি তার সাব-কনসিয়াস মাইন্ডের মধ্যে সেট হয়ে যায়।
ফলস্বরূপ, ব্র্যান্ডের নামটি মানুষের কাছে আরও বেশি পরিচিত হয়। এই জিনিসটি ডিজিটাল মার্কেটিং-এ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এসইও-এর প্রকারভেদ
এসইও মূলত ৩ প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
- বৈধ পদ্ধতি বা White Hat SEO
- অবৈধ পদ্ধতি বা Black Hat SEO
- শংকর পদ্ধতি বা Gray Hat SEO
হোয়াইট হ্যাট এসইও কি?
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের যে পদ্ধতির মাধ্যমে সকল বৈধ নিয়ম নীতি মেনে কী-ওয়ার্ড রেংক করানো হয় সে পদ্ধতিকে হোয়াইট হ্যাট এসইও বলে। এটি এসইও-এর একটি নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া। বৈধ উপায়ে ওয়েবসাইটকে রেংক করানো হলে সেই রেংক অধিক স্থায়ি হয়। তাছাড়া গুগল থেকে পেলান্টি খাওয়ার চান্স থাকে না।
হোয়াইট হ্যাট এসইও কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. অন পেজ এসইও (ON Page SEO)
২. অফ পেজ এসইও (OFF Page SEO)
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কি?
যেই পদ্ধতি যা অবলম্বন করে গুগলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একটি ওয়েবসাইটকে আমরা অস্থায়ী সময়ের জন্য রেংক করতে পারি তাকে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও বলে। এটি একটি অবৈধ প্রক্রিয়া। এসইওতে কখনোই এই প্রথা অবলম্বন করা উচিত নয়। কারন গুগল যদি বুঝতে পারে তাহলে আপনার সাইটটিকে রেংক হওয়া থেকে বাতিল করে দিতে পারে। অর্থাৎ, আপনি পেনাল্টি খেতে পারেন।
কিভাবে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও চিনবো?
গুগলে রেংক করানোর অনেক ধরনের অবৈধ উপায় রয়েছে। নিচে কিছু ব্ল্যাক হ্যাট এসইও-এর উদাহরন দেওয়া হলো যাতে করে আপনি এইগুলো থেকে বিরত থাকতে পারেন।
Spam comment:
এসইও-তে ব্যাংকলিংক তৈরি করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু প্রায় সকল ওয়েবসাইটের কমেন্ট সেকশনেই আপনি চাইলে কমেন্ট করতে পারেন এবং সেখান থেকে ব্যাকলিংকও তৈরি করতে পারেন। প্রথম দিকে গুগল কমেন্ট ব্যাকলিংককে গুরুত্ব দিলেও এখন গুগলের কাছে এই ব্যাকলিংকের কোনো দাম নেই। কিন্তু, আপনি যদি বেশি-বেশি কমেন্ট ব্যাকলিংক তৈরি করতে থাকেন তাহলে সেটি ব্ল্যাক হ্যাট এসইও-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
Duplicating content:
অন্য জায়গা থেকে যেকোনো কিছু কপি করে তা নিজের ওয়েবসাইটে পেস্ট করলে তা গুগল খারাপ চোখে দেখে। আপনি যদি অন্য জায়গা থেকে কন্টেট কপি করে নিজের ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন তাহলে গুগল এটি খুব সহজেই ধরতে পারে। এবং বেশি বেশি কন্টেন্ট কপি করলে আপনাকে গুগল পেনাল্টি দিয়ে দিবে। তাই কন্টেন্ট পোস্ট করার আগে এটি কপিরাইট ফ্রি কিনা তা যাচাই করে নিন। Check if your content is copyright free
Keyword stuffing:
একই কি-ওয়ার্ড বারবার প্রতি লাইকে ব্যাবহার করাকে কি-ওয়ার্ড স্টাফিং বলা হয়। আপনি যেই কি-ওয়ার্ডের জন্য আপনার ওয়েবসাইট রেংক করতে চাচ্ছেন সেটি যদি বারবার আপনার কন্টেন্টের মধ্যে দিতেই থাকেন দিতেই থাকেন তাহলে Keyword stuffing করা হবে।
Hidden text:
মূলত ওয়েবসাইটের ব্যাক-গ্রাউন্ড কালার সাদা এবং টেক্সটের কালার কালো হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি চাইলে এইগোলো কাস্টোমাইজ করতে পারবেন। আপনি টেক্সটের কালার কালো থেকে লাল, নীল কিংবা যেকোনো রকম করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি টেক্সটের কালার সাদা করে দেন তাহলে ব্যাকগ্রাউন্ড কালার এবং টেক্সটের কালার মিলে যাবে। ফলে সেই লেখাটি আর দেখা যাবে না। একেই Hidden text বলা হয় এবং এসইও-তে এটি মারাত্নক ক্ষতিকর।
গ্রে হ্যাট এসইও কি?
গ্রে হ্যাট এসইও হলো হোয়াইট হ্যাট এবং ব্ল্যাক হ্যাট-এর মধ্যবর্তী অবস্থান। অর্ধেক বৈধ নিয়ম এবং বাকি অর্ধেক অবৈধ নিয়মে এসইও করাকে গ্রে হ্যাট এসইও বলে। বিগেনার হিসাবে, এই পদ্ধতিটিও আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং, আমরা এই জাতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করব না।
অন পেজ এসইও কি?
ওয়েবসাইটের অভ্যন্তরে যে কাজগুলো করা হয়ে থাকে অন পেজ এসইও বলে।
যেমনঃ
- টাইটেল অপ্টিমাইজ করা
- ট্যাগ ব্যবহার করা
- কনটেন্ট অপ্টিমাইজ করা
- কিওয়ার্ড বাছাই করে কাজ করা
- সাইটের লোডিং স্পিড, ইত্যাদি।
এসকল বিষয় অন পেজ অপ্টিমাইজেশনের অন্তর্ভুক্ত । কোনো সাইট রেংক করায় এই অপ্টিমাইজেশন খুব গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
অফ পেজ এসইও কি?
অফ পেজ এসইও হলো এককথায় মার্কেটিং করা। ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য যে প্রচার প্রচারণা চালানো হয় তাকে অফ পেজ এসইও বলে।
অর্থাৎ, অফ পেজ এসইও বলতে আমরা মূলত Link Building বা ব্যাক লিঙ্ক (Backlink) তৈরি করাকে বুঝি।
মনে করুন, আপনার ওয়েবসাইটে আপনি খুব ভালো করে অন পেইজ এসইও করেছেন। অর্থাৎ, গুগলের চোখে এখন আপনার ওয়েবসাইট খুব ভালো একটি ওয়েবসাইট হওয়ার চান্স আছে। কিন্তু গুগল এটি কখনো বিশ্বাস করবে না যদি না মানুষ আপনাকে ভালো বলে।
অর্থাৎ, অন্যসব ওয়েবসাইটে যদি আপনার ওয়েবসাইট নিয়ে কথা বলে, লেখালেখি করে এবং আপনার ওয়েবসাইটটি তাদের ওয়েবসাইটে শেয়ার করে তাহলেই গুগল আপনাকে অনেক ভালো একটি ওয়েবসাইট হিসেবে ধরে নিবে। এবং তাহলেই আপনি গুগলে রেংক করাতে পারবেন।
এইযে অন্য মানুষের ওয়েবসাইটে আপনার সাইটের একটি URL পাবলিশ করার কারনে আপনার Backlinks তৈরি হলো এই ব্যাকলিংক তৈরি করাকেই অফ পেজ এসইও বলে।
সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
যেহেতু এসইও করার প্রধান লক্ষ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনে প্রথম স্থান দখল সেহেতু সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে তা আমাদের জানা খুবই জরুরী।
আমাদের সবারই একটি ধারণা আছে যে, গুগল সবকিছু জানে। আসলে ধারনাটি মিথ্যা।কারন গুগল শুধুমাত্র একটি সফটওয়ার এবং সে তেমন বিশেষ কিছুই জানে না। সে কেবল জানে যে কোন জিনিসটি কোথায় রয়েছে। এর বাইরে গুগল কিছুই জানে না ।
আমরা একজন লাইব্রেরিয়ানের সাথে গুগলের তুলনা করতে পারি। একজন লাইব্রেরিয়ান যেমন সকল বইয়ের সবকিছু জানে না কিন্তু সে জানে যে কোন বইটি কোথায় রয়েছে ঠিক তেমনই গুগল ইন্টানেটের সবকিছু জানে না কিন্তু সে জানে কোন ওয়েবসাইটে কোন ইনফরমেশনটি কোথায় রয়েছে। তাই কেউ যদি কিছু জানার জন্য সার্চ করে, গুগল সেই ওয়েবসাইটের লিংকটিকে দ্রুত সামনে উপস্থিত করতে সক্ষম হয়।
গুগল সার্চ ইঞ্জিনের কাজ করার প্রক্রিয়া
আমরা তো জেনেছি যে কেউ অনুসন্ধান করলে গুগল কোনো ওয়েবসাইটের উপযুক্ত লিংক এনে আমাদের প্রদর্শিত করায়। কিন্তু গুগল সেটি কিভাবে করে?
এটি করার জন্য গুগকে একটি এটোমেটিক সফটওয়্যার আছে যাকে বলা হয় Google’s Bot অথবা Crawler । এই গুগল বট ২৪ ঘন্টার সারা ইন্টারনেট জগত ভ্রমন করে এবং কোথায় কোন ইনফরমেশন যুক্ত হলো তা সংগ্রহ করে রেখে দেয়। ফলে, যখনই কেউ কোনো কিছু জানার জন্য গুগলে সার্চ করে, গুগলবট তার ডেটাবেস থেকে লিংকটি এনে আমাদের প্রদর্শিত করায়। এভাবে একটি সার্চ ইঞ্জিন কাজ করে।
গুগল কিভাবে একটি ওয়েবসাইটকে যাচাই করে?
একটি সাইটকে যাচাই করার জন্য গুললের কিছু এলগরিদম রয়েছে যাকে এসইও-এর ভাষায় ranking factors বলা হয়। এই রেংকিং ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে গুলগ কোনো একটি সাইটকে রেংক দিয়ে থাকে।
গুগল জানায় যে, কোনো ওয়েবসাইটকে যাচাই করার জন্য তাদের ২০০ টির বেশি রেংকিং ফেক্টর আছে। কিন্তু ফেক্টরগুলো গুগল কখনোই প্রকাশ করে না। কেননা যদি গুগল এটি প্রকাশ করে দিতো, তাহলে লোকজন ভালো কন্টেন্ট লেখার উপর নজর দিতো না। সবাই ফেক্টরগুলোর উপর নির্ভর করে ওয়েবসাইট রেংক করিয়ে ফেলতো। ফলে, কেউ সার্চ করলে গুগল সঠিক ফলাফল দেখাতে পারতো না। এবং এতে গুগলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতো।
কিন্তু, কিছু এসইও এক্সপার্টরা অনেক গবেষনা করে বের করতে পেরেছে যে রেংকিং ফেক্টরগুলো কি কি। এর মধ্যে প্রধান ৫ টি ফেক্টর হলোঃ
- কন্টেন্ট কোয়ালিটি
- ডোমেইন ফেক্টর
- ইউজার এক্টিভিটি
- অন-পেইজ ফেক্টর
- অফ-পেইজ ফেক্টর
এসব ফেক্টরের উপর নির্ভর করে গুগল যাচাই করে যে কোন ওয়েবসাইটি রেংকিং-এ আগে থাকার যোগ্য। তাছাড়া গুগল দেখে যে কোন সাইটটি নিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি আলোচনা হচ্ছে চারপাশে। গুগল সেই সাইটটিকেই প্রথমে স্থান দেয়।
রেংকিং ফেক্টরগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিনঃ এসইও-তে কোন রেংকিং ফ্যাক্টরগুলো গুরুত্বপূর্ন?
কিভাবে ওয়েবসাইটে এসইও করতে হয়
এসইও করার জন্য এর অনেক নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি কোনো ওয়েবসাইটের এসইও করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। যদি এসইও-এর কাজ শিখে নিজের দক্ষতাকে বাড়াতে পারেন, তাহলে অনলাইনে ফ্রিলান্সিং করেও অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। কেননা, সারা বিশ্বের মধ্যে এই এসইও-এর অনেক চাহিদা রয়েছে।
এসইও করতে গেলে আপনাকে এর কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
ধাপগুলো হলোঃ
- কি-ওয়ার্ড রিসার্চ
- অন-পেইজ অপ্টিমাইজেশন
- অফ-পেইজ অপ্টিমাইজেশন
অর্থাৎ, যেকোনো একটি ভালো কি-ওয়ার্ড বাছাই করে সেই কি-ওয়ার্ড অনুযায়ী আপনার কন্টেন্টকে সাজাতে হবে। এবং সেই কন্টেন্ট এর মার্কেটিং তথা অফ-পেইজ অপ্টিমাইজেশন করতে হবে।
কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায়
কি-ওয়ার্ড হলো যেটি লিখে মানুষ গুগলে সার্চ করে। প্রতিনিয়তই সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে গুগলে সার্চ করছে। তাই কি-ওয়ার্ড নিয়ে ওয়েবসাইট-এর মালিকদের মধ্যে রয়েছে নানান প্রতিযোগীতা। SEO নিয়ে এই প্রতিযোগীতার মধ্যে সহজ একটি কি-ওয়ার্ড বাছাই করা খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।
যদি সঠিক কি-ওয়ার্ড বাছাই করা না যায় তাহলে ওয়েবসাইট রেংক করানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আবার বেশি সংখ্যকবার সার্চ হয় এমন কি-ওয়ার্ড না নিলেও সাইটে ট্রাফিক পাওয়া যায় না। তাই এই ২ দিকে খেয়াল রেখেই Keyword Research করতে হয়।
একটি ভালো কি-ওয়ার্ডে নূন্যতম ২০০ সার্চ ভলিউম থাকা উচিত এবং অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগী থাকা উচিত।কি-ওয়ার্ড রিসার্চের বিভিন্ন SEO Tools রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই Research করতে পারবেন। এর মধ্যে কিছু আছে পেইড এবং কিছু ফ্রি। তবে পেইড টুলসগুলোও অল্প কিছু কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
Keyword Research Tools:
- Moz
- Semrush
- Ahrefs
- Google keyword planner(totally free)
- keyword revealer
তাছাড়া বিভিন্ন Chrome Extension ব্যবহার করেও কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করা যায়।
জনপ্রিয় Keyword Research Extension হলোঃ Whatsmyserp
ওয়েবসাইটের অন-পেজ এসইও করার উপায়
আপনার ওয়েবসাইটটি হয় ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি এবং আপনি সেখানে On-page SEO করতে চান তাহলে তাহলে আপনি ব্যভার করতে পারেন Yoast SEO plugin।
এটির মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই অন-পেইজ এসইও করতে পারবেন। এই এই প্লাগিংটি ইন্সটল করার পর এটি সেটাপ করে নিতে হবে। এবং আপনার ওয়েবসাইটটিকে Google Search Console এ যুক্ত করে নিতে হবে হবে এবং সেখানে সাইট-ম্যাপ সংযুক্ত করতে হবে। যা আপনি সহজেই এই প্লাগিনের মাধ্যমে করতে পারবেন।
তাছাড়া কন্টেন্ট লেখার সময় কিভাবে কন্টেন্ট অপ্টিমাইজ করবেন তা এই প্লাগিন আপনাকে সাজেস্ট করবে এভাবে খুব সহজেই এই এসইও প্লাগিন দিয়ে অন-পেজ এসইও করে ফেলতে পারবেন।
ওয়েবসাইটে অফ-পেজ এসইও করার উপায়
অফ-পেজ এসইও করার জন্য আপনাকে শুধু Backlink তৈরি করতে হবে। একটি সাইট রেংক করতে যেটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে সেটি হলো এই Backlink. আর এই ব্যাক-লিংক তৈরি করা অনেক উপায় রয়েছে।
তবে অধিকাংশ ব্লগাররা এখানে এসেই ভুল করে। সঠিক নিয়মে ব্যাকলিংক তৈরি না করলে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হতে পারে। এখানে মনে রাখবেন, হাজার হাজার খারাপ ব্যাকলিংক তৈরি করার চেয়ে একটি ভালো ব্যাকলিংক তৈরি করা অনেক ভালো। সবসময় High DA সাইট থেকে ব্যাকলিংক নেওয়ার চেষ্ঠা করবেন। এবং একটি সাইট থেকে বড়জোর ২টির বেশি ব্যাকলিংক তৈরি করা উচিত হয়।
কি ধরনের ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারেনঃ
- Guest blogging backlinks
- Backlinks in business profiles
- Guest post bio backlinks
- infographics backlink
- broken link
- PBN backlink
- web 2.0
- exchanging backlink etc.
চেষ্ঠা করবেন ৭০% ব্যাকলিংক যেনো Do-follow backlink হয়।
এসইও শেখার সহজ উপায় কি?
এসইও অনেক বড় একটি ইন্ডাজট্রিজ। এবং সেখানে অনেক অনেক বিষয় রয়েছে। তাছাড়া সাড়া বিশ্বে এটি নিয়ে অনেক আলোচনা এবং প্রতিযোগীতা। ২০২১ সালে যদি কেউ এসইও শিখতে চায় তাহলে তার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।
কেননা খাতায়-কলমে এসইও শিখে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। ভালোভাবে এসইও শিখতে হলে প্রেক্টিস করে করে একটি সাইট র্যাংক করানোর মাধ্যমে শিখতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে সাইট রেংক করাতে হয়।
যেহেতু বর্তমান ২০২১ সালে প্রতিযোগীতা একটু বেশি তাই নতুনদের জন্য এটি একটু চেলেঞ্জিং ব্যাপার-ই বটে। কিন্তু ভালো করে চেষ্ঠা করলে ৬মাস থেকে ১ বছরের ভেতরে আপনি এটি খুব ভালোভাবেই শিখে যাবেন।
লোকাল এসইও কি
পুরো বিশ্বকে টার্গেট না করে শুধুমাত্র যেকোনো একটি দেশ বা অঞ্চল টার্গেট করে এসইও করাকে লোকাল এসইও বলে।
যেমন , আপনার যদি বাংলাদেশে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠান থাকে এবং আপনার সার্ভিসগুলো শুধু বাংলাদেশি মানুষদের জন্যই হয়ে থাকে তাহলে আপনি কেবল বাংলাদেশী মানুষদের টার্গেট করবেন। আপনি চাইবেন শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই যেন আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আসে। কেননা সেক্ষেত্রে জাপান থেকে ট্রাফিক আসলে আপনার কোনো লাভ হবে না।
আশা করি বুঝাতে পেরেছি। অর্থাৎ, যেকোনো একটি দেশের মানুষের সার্ভিস দেওয়ার জন্য যেই ওয়েবসাইট রয়েছে তার এসইও করাকে লোকাল এসইও বলে।
আর্টিকালটি কে আপনি কতটুকু সহায়ক বলে মনে করেন? নিচে কমেন্ট করে জানান।
সর্বশেষ
বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে এসইও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এসইও এর কাজ শিখলে আপনি নিজের ওয়েবসাইট দাড় করাতে পারবেন। কিংবা সারাবিশ্বে এসইও সার্ভিস দিয়ে ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।
এটির অনেক চাহিদা রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এর চাহিদা থাকবে। আশা করি এসইও কি , এসইও এর প্রকারভেদ এবং কিভাবে এসইও করতে হয় সে বিষয়ে আপনি সম্পূর্ন ধারনা পেয়েছেন। যদি আরো কোনো জিজ্ঞাসা থাকে। তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
অসাধারণ ভাই ❤️
অনেক অনেক অনেক বেশি উপকৃত হলাম|
বাংলা ভাষায় এমন সুন্দর আর্টিকেল খুবই কম। অসাধারণ একটি পোস্ট করেছেন ভাই। পোষ্টটি পড়ে উপকৃত হলাম এবং আশা করি সামনের দিনে এমন ভালো পোস্ট পাব। অনেক দূর এগিয়ে যাক। পাশে আছি সবসময়
অনেক চমৎকার একটা পোস্ট লিখেছেন। মানুষকে বুঝানোর জন্য যে সকল কৌশল অবলম্বন করেছেন তা মাত্র যৌগ্য মানুষই করতে পারে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময় এবং ভালো কিছু নিয়ে আমাদের মধ্যে অবিচল থাকবেন এই কামনা করি।
অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি উপকৃত হয়েছি। কেননা আমি নবীন ডিজিটাল মার্কেটিং শিখছি।