যারা ব্যাংকিং লেনদেন করে থাকেন তারা অনেকেই ক্রেডিট কার্ড কি সেটা চিনে থাকবেন। ব্যাংক থেকে যেমন ডেবিট কার্ড এর সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে তেমনি গ্রাহকরা চাইলে যোগ্যতা অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক থেকে নিতে পারেন। আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড কি, ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা, ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।
ক্রেডিট কার্ড কি
ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে একটি কার্ডের মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত অর্থ যা সাধারণত প্রয়োজনে ব্যবহার বা খরচ করা যাবে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনার একাউন্টে টাকা শেষ হয়ে গেলে ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে ব্যবহার করতে পারবেন। ধরুন আপনার একাউন্টে ২ লাখ টাকা রয়েছে আপনি সারাদিন কেনাকাটা করেছেন হঠাৎ করে দেখছেন এই দুই লাখ টাকা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে তখন আপনি চাইলে ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করে ক্রেডিট কার্ডে টাকা ঢুকাতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ডের লিমিট সাধারণত ইনকামের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ব্যাংক ভেদে ক্রেডিট কার্ডের লিমিট কমবেশি হয়ে থাকে।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কোন ব্যবহারকারী চাইলে অনলাইনে এবং অফলাইনে দুটি স্থানে লেনদেন করতে পারেন । তাছাড়া এমন অনেক ক্রেডিট কার্ড রয়েছে যেগুলো আপনারা দেশের বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম বা ক্রেডিট কার্ডের লিমিট কিভাবে কাজ করে থাকে এই বিষয়ে অবশ্যই একজন ব্যবহারকারীর জানা দরকার। সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে কোন গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে খরচ করতে পারেন। ব্যাংক থেকে ধার করা টাকাটাই হচ্ছে ক্রেডিট লিমিট।
গ্রাহকের মাসিক ইনকামের উপর ভিত্তি করে ব্যাংক তাদেরকে ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে। ধরুন আপনি একটি চাকরি করেন বেতন প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা তাহলে আপনাকে এক লক্ষ টাকার পর্যন্ত লিমিটের একটি ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হতে পারে। সাধারণত চাকরি ক্ষেত্রে প্রতি মাসে যেমন স্যালারি দেওয়া হয়ে থাকে, ক্রেডিট কার্ড লিমিটটিও এর ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সারা মাসে যত জায়গায় যত টাকা পেমেন্ট করবেন মাস শেষে সেই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে একটি বিল হিসাবে আপনার নামে ইস্যু করা হবে।আর যদি আপনি ক্রেডিট কার্ডটি দেশের বাইরে ব্যবহার করার জন্য এনাবল করতে চান তাহলে অবশ্যই পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে।তখন আপনি চাইলে ক্রেডিট লিমিটের নির্দিষ্ট একটি অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় কনভার্ট করে নিতে পারবেন।
এটার মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের বাইরে গেলেও অন্যান্য দেশেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন সম্পূর্ণ করতে পারবেন। তাছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট কেনার ক্ষেত্রে আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
ক্রেডিট কার্ড কি ইতিপূর্বে সেই বিষয়ে হয়তো জেনে গিয়েছেন।তাহলে এবার জানতে হবে ক্রেডিট কার্ড পেতে কি কি লাগে বা ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে।সাধারণত কোন গ্রাহক যখন ব্যাংকে একাউন্ট করে থাকেন তখন সে চাইলে ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। কোন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য তাদের কিছু শর্তাবলী রয়েছে সেগুলো পূরণ করা লাগে অর্থাৎ কিছু যোগ্যতা লাগে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বড় বড় ব্যাংকগুলোতে শুধুমাত্র তাদেরকেই ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে যারা ভালো বেতনের চাকরি করে থাকেন। অর্থাৎ নূন্যতম ৪০ হাজার টাকার উপরে বেতন পেতে হবে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য। তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের শর্তাবলী ভিন্নতর হতে পারে।
কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো
ক্রেডিট কার্ড ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে।বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের জন্য ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা চালু করেছে।তাদের মধ্যে সেরা চারটি ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আমি আপনাদেরকে বলবো। অর্থাৎ এই চারটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনারা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন।
১.City bank amex credit card: সিটি ব্যাংক সকল সময়েই তাদের গ্রাহকদের দারুন সুবিধা দিয়ে থাকে।তাদের এই অসাধারণ সুবিধাগুলোর মধ্যে amex credit card অন্যতম।এই ধরনের ক্রেডিট কার্ড খুবই কম ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের দিয়ে থাকে। এই ক্রেডিট কার্ডটির মাধ্যমে আপনারা পাবেন APR রেট 27.00%, 45 দিনের একটি গ্রেস পিরিওড।তাছাড়া এই কার্ডটির রেনুয়াল খরচ একদম ফ্রি।
২.Ebl credit card: যারা ভ্রমণ প্রিয় লোক রয়েছেন বা অনলাইনে টুকিটাকি অনেক ধরনের কাজ করে থাকেন তাদের জন্য ইবিএল ক্রেডিট কার্ড টি অসাধারণ হতে পারে।এই কার্ডটি ব্যবহার করে বিদেশে ভ্রমণ খরচ সহ, অনলাইনে পেমেন্ট, সহ যাবতীয় অনেক কাজ নির্বিঘ্নেসম্পন্ন করা যায়। বিশেষ করে তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের অনেকের পছন্দের একটি কার্ড এটি।
৩.Dbbl credit card: ডাচ বাংলা ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি ব্যাংক। ডাচ বাংলা ব্যাংকের রয়েছে Dbbl ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে উভয় স্থানে পেমেন্ট করা যাবে। তাছাড়া এখানে আপনারা পাবেন APR রেট 15.00%, 50 দিনের একটি গ্রেস পিরিওড এবং কার্ডের রেনুয়াল ফি একদম ফ্রি।
৪.ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডঃ বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে তাদের ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যারা শরিয়াভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড নিতে চান ইসলামিক ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডটি নিতে পারেন। এই কার্ডটি ব্যবহার করে আপনারা খুব সহজে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে পেমেন্ট সহ যাবতীয় কাজ করতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম
ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা বা কিভাবে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলতে হয় এই বিষয়েও জ্ঞান থাকা জরুরী। ব্যবহারকারী চাইলে ক্রেডিট কার্ড থেকে তিন পদ্ধতিতে টাকা তুলতে পারেন।
➡️এটিএম বুথ থেকে
➡️চেকের মাধ্যমে
➡️মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করে
ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম বুথের মাধ্যমে টাকা তোলা
এটিএম বুথ ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা যাবে। আপনার ক্রেডিট কার্ডটি যে ব্যাংক থেকে ইস্যু করা হয়েছে উক্ত ব্যাংক ও পার্টনার ব্যাংকের এটিএম থেকে ক্রেডিট কার্ডের টাকা তোলা যাবে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম বুথের মাধ্যমে টাকা তুলতে গেলে বেশি পরিমানে ফি প্রদান করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ
চেকের মাধ্যমে টাকা তোলার নিয়ম
ক্রেডিট কার্ডের চেক ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডে থাকা অর্থব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি ক্রেডিট কার্ডের চেক ব্যবহার করে পল্লী বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে চেকের মাধ্যমে যে বিল পরিশোধ করা হয় তার উপর অনেক ইন্টারেস্ট নেওয়া হয়ে থাকে যার কারণে অনেকেই চেকের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলেন না।
মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা
বিকাশ এবং নগদ এর মত মোবাইল ওয়ালেট পরিষেবা গুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই ক্রেডিট কার্ডের টাকা নিয়ে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের কে অ্যাড মানি করে টাকা নিজের ওয়ালেট নাম্বারে ট্রান্সফার করে নিতে হবে। পরবর্তীতে চাইলে এই টাকা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে তুলে খুব সহজেই খরচ করতে পারবেন । তবে এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি চার্জ করা হয়ে থাকে।
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা ক্রেডিট কার্ড কি ও ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবো এই বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আপনার মূল্যবান প্রশ্নটির খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর প্রদান করা হবে।