গুগল এডসেন্স হলো গুগলের একটি বিজ্ঞাপন প্রচার প্রোগ্রাম। আগে গুগল এপ্রোভাল পাওয়া সহজ ছিল, কিন্তু বর্তমানে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে। আজকের আর্টিকালে গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় বিস্তারিত আপনাদের জানাবো।
ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্স পেতে হলে কিছু শর্ত আগে পূরন করতে হয়। সে সকল শর্ত পূরন করে এপ্লাই করে খুব তাড়াতাড়ি এপ্রোভাল পাওয়া যায়।
তা না হলে এডসেন্স এপ্রোভাল পেতে অনেক বিলম্ব হয়।
গুগল এডসেন্স কি
গুগল এডসেন্স হলো গুগলেরই একটি মনিটাইজেশন প্লার্টফর্ম। ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন করার জন্য এই প্লাটফর্মটি ব্যবহার করা হয়।
আপনি যদি একটি ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইট দিয়ে ব্লগিং শুরু করে থাকেন তাহলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন বা ব্লগ মনিটাইজেশন করে সেখান থেকে টাকা আয় করার জন্য গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল নিতে হবে।
তারপর গুগল এডসেন্স কর্তৃক আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে এবং সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য আপনাকে অর্থ প্রধান করা হবে।
ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় ২০২৪
গুগল এডসেন্স পেতে গেলে সাইটের আকর্ষনীয় ডিজানের পাশাপাশি সাইটে ভালো ভিজিটর থাকতে হবে। থাকতে হবে পর্যাপ্ত আর্টিকেল সংখ্যা।
আবার শুধু আর্টিকেল থাকলেই হবে না। সেসব আর্টিকেলগুলো ইনফরমেটিভ বা ইউজারের কাজে আসে এমন আর্টিকেল থাকতে হবে।
মোটকথা, আপনার সাইটটিকে সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট করে তুলতে হবে। চলুন কিভাবে একটি সাইটকে পার্ফেক্ট করা যায় যে বিষয়টি দেখে নিন।
১। ওয়েবসাইটে টপ লেভেল ডোমেইন ব্যবহার করুন
ওয়েবসাইটের ডোমেইন না সাইটের পরিচয় বহন করে। সে ডোমেইনটি যদি হয় টপ লেভেল ডোমেইন তাহলে সেটি যেমন ইউজারের কাছে মূল্যায়ন পায়, ঠিক তেমনি গুগলের চোখেও সাইটির মূল্য বৃদ্ধি পায়।
তাই আপনি যখন গুগল এডসেন্স পাওয়ার আসায় সাইট বানাবেন অবশ্যই টপ লেভেল ডোমেইন (.com, .net, .org) নেওয়ার চেষ্ঠা করবেন।
দেখা গেছে উচ্চমানের ডোমেইন গুলোতে বিশেষ করে .com ডোমেইনে খুব দ্রুত গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ন টিপসঃ ওয়েবসাইটের সুন্দর ডোমেইন খুজে বের করার নিয়ম
২। ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ পেজসমূহ যুক্ত করুন
গুগল এডসেন্স এ এপ্লাই করার আগে নিশ্চিত করুন আপনার ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ন পেইজগুলো রয়েছে। গুরুত্বপূর্ন পেইজ বলতে Privacy policy, Contact Us, Disclaimer, About Us এই পেইজ গুলোকে বুঝায়।
এই পেইজগুলো রয়েছে তা নিশ্চিত করুন এবং এসব পেইজের ভিতরে সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত । বিশেষ করে Privacy policy পেইজে সঠিক তথ্য না থাকলে সমস্যা হতে পারে।
৩। ওয়েবসাইটি সুন্দর ভাবে সাজান
গুগল এডসেন্স পেতে হলে আপনার সাইটের ডিজাইন হওয়া চাই খুবই প্রোফেশনাল । যদি আপনার সাইটের ডিজাইন ভাঙ্গাচোরা হয় তাহলে কি দেখে আপনাকে গুগল আপনারা সাইটে এডসেন্স দিবে? নিজেই ভাবুন।
তাই প্রথমে আপনার সাইটির ডিজাইন সুন্দর হতে হবে।মোটকথা, আপনার সাইট দেখে যেন কোনো কিছুর কমতি আছে মনে না হয়।
সাইটে সুন্দর করে একটি মেনু রাখুন, মেনুতে ৪-৫ টি ক্যাটাগরী রাখুর প্রতিটি ক্যাটাগরীতে অন্তত ৫ টি করে কপিরাইট্মুক্ত কন্টেন্ট রাখুন এবং সাইটের হেডার এবং ফোটারটি সুন্দর করে সেট করুন। বেস, হয়ে গেছে একটি প্রোফেশনাল ডিজাইন। আপনি যদি করতে না পারেন তাহলে কাউকে দিয়ে করিয়ে নিন কিংবা আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে আর্টিকাল আছে সেগুলো পড়ে ফেলুন।
৪। আপনার ওয়েবসাইটে কমপক্ষে ৩০ টি আর্টিকেল প্রকাশ করুন
কন্টেন্ট গুগল এডসেন্সের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । কেননা-
আপনি যখন এডসেন্সে প্রবেশ করবেন প্রথমই দেখবেন বড় করে লেখা আছে “আপনার কন্টেন্ট আমাদের কাছে মূল্যবান”
তাই সবথেকে বেশি কন্টেন্টের উপর জোর দিতে হবে। সাধারনত ২৫-৩০ টি কোয়ালিটিফুল কন্টেন্ট থাকলেই এডসেন্স পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি চেষ্ঠা করবেন ৩০ টির বেশি আর্টিকাল নিয়ে এডসেন্সে এপ্লাই করতে । তাহলে খুব দ্রুত এপ্রোভাল পেয়ে যাবেন।
আর কন্টেন্টগুলো তো অবশ্যই কপিরাইট মুক্ত হওয়া চাই। এবং কন্টেন্টগুলোর অন-পেইজ এসইও সম্পূর্ন করুন। এতে করে গুগল আপনার সাইটিকে আরো বেশি মূল্যবাল মনে করবে।
গুরুত্বপূর্ন টিপসঃ ব্লগে আর্টিকেল লেখার সঠিক নিয়ম
৫। কপিরাইট ইমেজ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
অনেকে অনেক সময় সব ঠিকঠাক রাখে কিন্তু সাইটের ইমেইজগুলো ডাইরেক্ট অন্য সাইট থেকে কিংবা ফেসবুক,টুইটার বা বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে ওয়েবসাইটের আর্টিকালে ব্যবহার করে। এর ফলে সে আর এডসেন্স পায় না । এবং বুঝতে ও পারে না যে কি কারনে সে এপ্রোভাল পায় নাই।
তাই আপনারা যারা সাইটে ইমেইজ ব্যবহার করবেন চেষ্ঠা করবে কপিরাইট্মুক্ত ইমেইজ ব্যবহার করার জন্য।
এখান থেকে ছবি কালেক্ট করেও একটু-আকটু এডিট করে ব্যবহার করে ব্যবহার করুন,তাহলে ভালো হবে।
৬। থার্ড-পার্টি এড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন না
আপনি যদি দ্রুত গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে চান তাহলে আপনার সাইটে যদি অন্য কোনো এড নেটওয়ার্ক থেকে থাকে তাহলে সেগুলো আগে রিমুভ করুন ।
কেননা এতে এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে সমস্যা হয়। তাছাড়া, অন্যান্য পপ-আপগুলোও রিমুভ করে দিলে ভালো হয়।
৭। আর্টিকালগুলো কমপক্ষে ৭০০ ওয়ার্ডের বেশি লেখার চেষ্ঠা করুন
আগেই বলেছি আর্টিকাল খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয় গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার ক্ষেত্রে। এডসেন্স পাওয়ার জন্য আপনার আর্টিকালগুলো একটু বর হলে ভালো হয়। তাই আমরা সাজেস্ট করি আর্টিকাল গুলো যেনো ৭০০ শব্দের বেশি হয়।
শুধু মাত্র এডসেন্সের জন্য জন্য নয়। আপনি যদি ব্লগিং করেন তাহলে অবশ্যঅই এসইও সম্পর্কে জানেন। আর কোয়ালিটি কন্টেন্ট/আর্টিকাল না হলে এসইও করে সাইট রেংক করানো যায় না এ বিষয়টিও হয়তো জানেন। তাই আর্টিকালগুলো সব বিস্তারিত লিখার চেষ্ঠা করুন এবং যেন একটু বড় হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
আরো পড়ুনঃ গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে সহজ উপায়।
৮। ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসুন
পূর্বে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল নেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে ভিজিটর তেমন গুরুত্বপূর্ন ছিল না। ভালো মানের কন্টেন্ট থাকলেই এডসেন্স এপ্রোভাল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে একটি ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত ভিজিটর না থাকতে খুব সহজে এডসেন্স এপ্রোভাল পাওয়া যায় না।
তাই এডসেন্স এর জন্য এপ্লাই করার আগে ওয়েবসাইটে কিছু অর্গানিক ভিজিটর আনার চেষ্ঠা করুন। ওয়েবসাইটে নূন্যতম ৩০০০ ভিজিটর না থাকলে এপ্লাই না করাই ভালো।
৯। এআই(AI) দিয়ে কন্টেন্ট বানানো থেকে বিরত থাকুন
আপনি ওয়েবসাইটে অর্গানিক ভিজিটর তখনই আনতে সক্ষম হবেন যখন আর্টিকেলগুলো নিজে নিজে লিখবেন।
এক্ষেত্রে AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স টুল দিলে লেখা কন্টেন্টগুলো গুগল লো ভ্যালু কন্টেন্ট হিসেবে মূল্যায়ন করে। সেক্ষেত্রে এআই কন্টেন্ট গুগলে র্যাংক করে না এবং এগুলো দিয়ে এডসেন্স পাওয়াও সম্ভব হয় না।
তাই, সাইটে সবসময় অরিজিনাল কন্টেন্ট দেওয়ার চেষ্ঠা করেন। পাঠন ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট দেওয়ার চেষ্ঠা করেন।
১০। অন্যান্য ওয়েবসাইটকে ফলো করুন
আপনি যেহেতু গুগল এডসেন্স এর জন্য প্রথমবার এপ্লাই করছে সেহেতু ধরা যেতে পারে আপনার অভিজ্ঞতা কিছুটা কম।
তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় রয়েছে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেগুলোকে পর্যবেক্ষন করা। এতে করে আপনার জ্ঞান সমৃদ্ধি হবে এবং বুঝতে পারবেন কিভাবে ওয়েবসাইট সাজালে বেশি পরিমানে ভিজিটর পাওয়া যায় এবং সেসাথে গুগল এডসেন্স এপ্রোভাল নেওয়া যায়।
বিশেষ করে আপনার ওয়েবসাইটের আর্টিকেলগুলোকে সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলী করার জন্য অন্যান্য ওয়েবসাইটকে পর্যবেক্ষন করতেই হবে।
আপনার জন্য আরোঃ এডসেন্স থেকে টাকা তোলার পদ্ধতি
এডসেন্স সম্পর্কিত FAQs
ওয়েবসাইট খোলার কত দিন পর এডসেস্ন এ এপ্লাই করবো?
প্রথমবার এডসেন্স এপ্রোভাল না পেলে কি আবার এপ্লাই করা যাবে?
অতপঃপর, সমস্যাগুলো সমাধান করে পূনরায় আবার এপ্লাই করার সুযোগ আপনি পাবেন।
এডসেন্স এপ্লাই করার কত দিনের মধ্যে মেইল আসে?
তারপর যদি এপ্রোভাল দেওয়ার হয় তাহলে ৭-১৫ দিনের মধ্যে মেইল চলে আসে। আর যদি এর চেয়ে বেশি সময় নেয় তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইট এডসেন্স এপ্রোভাল রিজেক্ট হওয়ার চান্স বেশি।
সর্বশেষ কথা
উপরের আর্টিকালটি পড়ার পরেও যদি গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় সম্পর্কে কারো কোনো সমস্যা বা জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথবা ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সকলের সমস্যা সমাধানের চেষ্ঠা করবো। এবং আমাদের লেখা আর্টিকালগুলো কেমন লাগে জানাতে ভুলবেন না ।