google.com, pub-2818299811453184, DIRECT, f08c47fec0942fa0

আর্থিক কেলেংকারি: ডিবিসির সাবেক দুই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির গুজব সেল হিসেবে পরিচিত সিআরআই থেকে ‘ফ্যাসিস্ট সাংবাদিকদের’ মাসেহারা নেয়ার একটি তালিকা ফাঁস হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। যেখানে ডিবিসি নিউজের সম্পাদক (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) মাসুদ ইবনে আইয়ূব কার্জনের নাম আসে। ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয় জুলাই গণহত্যার মাসেও পিন্টু দুই লাখ এবং কার্জন আশি হাজার টাকা মাসেহারা নিয়েছেন। পরে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ সংবাদের প্রতিবাদ করেন। জয়ের সাফাই গাওয়ার ফলে তারা কেমন আওয়ামী সুবিধাভোগী ছিলেন বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার বর্তমান প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলেজেন্স ইউনিট। এরইমধ্যে সিআরআইয়ে আর্থিক সংশ্লিষ্টতায় সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকির ববি ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়েছে।

শেখ পরিবারের এই তিন সদস্যের পাশাপাশি সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু) এবং আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিআরআই ও সিআরআই–ইয়ং বাংলা প্রজেক্টের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবও জব্দ হয়েছে।

যার জেরে ঐ তালিকায় থাকা ৮ জনের মধ্যে ৪ জন সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে ইতিমধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় এবং রিমান্ডে জেরা করে আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানা যায়। অবস্থা বিবেচনা করে এবং বৈষম্য বিরোধীদের চাপের মুখে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং মাসুদ কার্জনকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয় ডিবিসি নিউজ কর্তৃপক্ষ।

৫ই আগস্টের পর গনমাধ্যমের বরাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ডিবিসি কতৃপক্ষের নজরে আনেন যে, জায়েদুল আহসান পিন্টু স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যাকারী উল্লেখ করে তিনটি বই লিখেছেন। জিয়া বিনাবিচারে হত্যা করেছেন সামরিক কর্মকর্তাদের, এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনটি বই লিখেছেন। যেসব বই আওয়ামী লীগ ইংরেজিতে অনুবাদ করে বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনীতিকদের পাঠিয়েছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অসংখ্য বক্তব্য অনলাইনে রয়েছে।

বিভিন্ন পক্ষ অভিযোগ করেন যে, পিন্টু ও কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। বিগত আওয়ামী শাসন আমলে তদবির বানিজ্য করে ঢাকায় ফ্লাট, বাড়ি, গাড়ি ও বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন তারা। মাসুদ কার্জন তার স্ত্রীর নামে আড়াই কোটি টাকা দিয়ে রাজধানীতে ফ্ল্যাট কিনেছেন। রয়েছে গাড়ি। পিন্টু বরখাস্ত হওয়ার পর ডিবিসি নিউজে ফিরতে দ্বারস্থ হয়েছেন বিএনপির কতিপয় নেতা এবং বর্তমান প্রশাসনের দু’একজন কর্তা ব‍্যক্তির। কিন্তু ডিবিসি নিউজ কতৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় কোন অনুরোধ রাখতে পারেননি বলে জানা যায়।

অভিযোগে জানা যায়, জায়েদুল আহসান পিন্টু ও মাসুদ ইবনে আইয়ুব কার্জনের আরও কিছু সহযোগী ডিবিসি ও বাইরে রয়েছে। আওয়ামী সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলামের মাধ্যমে যাকে তাকে জঙ্গি বানানোর দোকান খুলে বসেন জায়েদুল আহসান পিন্টু, যার নাম সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাডভোকেসি এন্ড রিসার্স ফাউন্ডেশন (সিসার্ফ)। এই এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক ফ্যাসিস্ট পিন্টুর স্ত্রী ৭১ টিভির উপস্থাপিকা শবনম আজিম। এনজিও ব্যুরো সূত্রে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পদে আছেন ডিবিসির আরও কয়েকজন। বিভিন্ন মানুষকে জঙ্গি বানানোর চক্রান্তর সফল বাস্তবায়ন করতো তারা। মনের মাধুরি মিশিয়ে পিন্টুর ইশারায় স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা করতেন।
সিআরআইর মাসোয়ারা এবং জংগী দমনের নামে এনজিওর মাধ্যমে সরকারি তহবিল পেয়ে রাজার হালে দিন কাটাতেন আর পুরো ডিবিসি চ‍্যানেলকে ফ‍্যাসীবাদী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করতেন নিয়মিত।

বর্তমান প্রশাসন তাই তদন্তে নেমেছে গত ১৫ বছরে এই চক্রটি মোট কত কোটি টাকা হাতিয়েছে এবং কিভাবে নিরীহ মানুষকে জংগী বানিয়ে আয়নাঘরে পাঠিয়েছে। পিন্টু চক্রের সাথে ডিবিসি নিউজের বার্তা প্রধানসহ কারা কারা জড়িত তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, পিন্টু ও তার সহযোগীদের দু’তিনজন টাকার ভাগাভাগি করলেও বার্তা সম্পাদক ও রিপোর্টারদের কয়েকজনকে বিনা পারিশ্রমিকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন গত নয়বছর ধরে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এ বিষয়ে সিআরআই ও কাউন্টার টেররিজমের নামে পাওয়া অর্থ ভাগাভাগির তথ্য প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *