ফুসফুস ভালো রাখার সঠিক উপায়

ফুসফুস ভালো রাখার উপায় : ফুসফুস আমাদের দেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটি ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। প্রশ্বাসের বায়ু আমাদের ফুসফুস এ গিয়ে ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড হয়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলে আমরা জীবন ধারণ করতে পারি। আমাদের ফুসফুস বেশিদিন সচল রাখতে দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। তাই চলুন ফুসফুস ভালো রাখার সঠিক উপায়গুলো কি কি তা জেনে আসি।

কি কারনে ফুসফুস অকেজো হতে পারে?

ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। ধূমপায়ীরা তাদের শরীরের অনেক যন্ত্র নষ্ট করে ফেলে। অধিকাংশ ধূমপায়ীদের ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই অভ্যাস আমাদের ফুসফুসকে পুড়ে ফেলে এবং ফুসফুসে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ তৈরি করে।

তাই, যারা ধূমপায়ী তাদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকেন। ধূমপান যাদের নেশায় পরিণত হয়েছে তাদের পক্ষে এটি ছাড়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এবং তারা প্রতিনিয়ত আরো অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই ধুমপান কে না বলুন।

তাতাছাড়া দৈনন্দিন জীবনের আরও অনেক অভ্যাসের কারণে আমাদের ফুসফুস অকেজো হয়ে যেতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে ধুলাবালি প্রবণ এলাকায় বসবাস করা, সর্দি কাশি হলে তা অবহেলা করা, দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট রোগে ভোগা ইত্যাদি।

কিভাবে আমাদের ফুসফুস ভালো রাখার উপায়গুলো কি কি?

কিছু কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো ফলো করে আমাদের ফুসফুস ভালো রাখতে পারি। তো চলুন সময় নষ্ট না করে নিয়মগুলো জেনে নিই এবং নিজের জীবনে প্রয়োগ করে সুস্থ ফুসফুস অর্জন করি। উপায়গুলো নিন্মরূপঃ

গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করুন

শারীরিক সুস্থতার জন্য গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের কোনো বিকল্প নেই। এতে অনেক পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফুসফুস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফুসফুসের বিভিন্ন টিস্যুগুলো ধূমপান করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। গ্রিন টি’তে থাকা এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো এই ক্ষতি থেকে আপনার ফুসফুসকে রক্ষা করবে। তাই, ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের নিয়মিত গ্রিন টি পান করা উচিত।

The Journal of Nutrition প্রকাশিত এক গবেষণায় গ্রিন টি’র সক্ষমতার বিষয়ে জানানো হয়েছে। এক হাজার কোরিয়ান প্রাপ্তবয়স্কের উপর এই গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় যে গ্রিন টি না খাওয়া ব্যক্তিদের ফুসফুসের তুলনায় যারা নিয়মিত এটি খেয়েছেন; তাদের ফুসফুস বেশি ভালো থাকে।

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার খান 

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবারের মধ্যে রয়েছে হলুদ এবং সবুজ শাক-সবজি, চেরি ফল, ব্লোবেরি, জলপাই, আখরোট, মটরশুটি ও মসুর ডাল। বিশেষজ্ঞদের মতে শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভব করলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত ।

এসব খাবারের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান আপনার ফুসফুসকে ভালো রাখবে। তাছাড়া এই জাতীয় খাবারগুলো সর্দি-কাশি বিরুদ্ধেও লড়াই করে আপনাকে সুস্থ রাখে। তাই ফুসফুল ভালো রাখতে বেশি করে এ ধরনের খাবারগুলো বেশি করে খাওয়া শুরু করুন। আশা করা যায় এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

স্টিম থেরাপি বা গরম পানির ভাঁপ নিন

স্টিম থেরাপি বা গরম পানির ভাঁপ নতুন কিছু নয়। ফুসফুসের চিকিৎসাসহ সর্দি-কাশি সহ অনেক উপকারের জন্যই এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়ে আসছে আদি কাল থেকেই। গরম পানির ভাঁপ সরাসরি ফুসফুসের এলবিউলাইকে এটাক করে এবং ফুসফুস এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন জীবানু বা ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেয়। তাই, ফুসফুসকে সতেজ রাখতে হলে আব শ্বাসকষ্ট, হাপানি থেকে রক্ষা পেতে হলে সঠিক নিয়মে আমাদের নিয়মিত ভাপ নিতে হবে।

নিয়মগুলো নিন্মরূপঃ

  1. প্রথমে পানিকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
  2. এরপর গরম পানি যেকোনো একটি বাটির মধ্যে ঢেলে মুখমণ্ডলকে গরম পানির ওপর বরাবর রাখুন।
  3. সতর্ক থাকতে হবে যেন মুখমণ্ডল গরম পানির সংস্পর্শে না আসে।
  4. পানি এবং মুখমন্ডলের মধ্যে যেন ৫-৬ ইঞ্চি দূরত্ব থাকে তা নিশ্চিত করুন।
  5. মাথার ওপর একটি তোয়ালে ধরে রাখুন।
  6. এবার নাক দিয়ে জোরে জোরে ভাপ টানতে থাকুন, যেন তা ফুসফুসে পৌঁছতে পারে।

ফুসফুস ভালো রাখতে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এই নিয়মে ভাঁপ নিতে পারেন এবং প্রতিবার সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট এভাবে ভাপ নিন। কতদিন পরে আপনি নিজেই আপনার ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপ আগে থেকে অনেক ভালো অনুভব করবেন ইন-শা-আল্লাহ।

মধু খাওয়া শুরু করুন

কাশি কমাতে মধু খেতে পারেন। ফুসফুসে জমা শ্লেষ্মা দূর করতে মধু সাহায্য করে। কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে কাশির প্রকোপ কমে। মধুতে রয়েছে জীবাণুনাশক উপাদানসমূহ, যা সংক্রমণ রোধ করে।

তাই মধু আপনার ফুসফুসকে বিভিন্ন সংক্রামক জীবানুর হাত থেকে রক্ষা করে একটি সুস্থ জীবন উপহার দিতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন প্রতিদিন কিংবা সাপ্তাহে ২ বার মধু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গাজর: 

গাজরের রস শুধু ফুসফুস নয়, শরীরের নানা দূষিত পদার্থকেও বাইরে বের করে দেয়। প্রতিদিন অল্প করে গাজরের রস খেলে শরীর অনেক সতেজ থাকে। গাজরের সঙ্গে আপেল বা আঙুরের রসও খেতে পারেন। এতেও অনেক উপকার পাবেন, আপনার ফুসফুস ভালো থাকবে।

শরীরচর্চা: 

ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি কমে।

ফুসফুসের সুস্থতায় নিশ্বাসের ব্যায়ামগুলো করার বিকল্প নেই। ব্রিদিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে ফুসফুসের জটিলতা দূর করা সম্ভব। বুক ভরে শ্বাস নেওয়ায় শরীরে অক্সিজেনের সাপ্লাই বাড়ে। যারা সিওপিডি, সিসটিক ফাইব্রোসিস বা অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজ সবচেয়ে কার্যকরী।

ফুসফুল ভালো রাখতে যেভাবে ফুসফুসের ব্যায়াম করতে পারেনঃ

ফুসফুস ভালো রাখার উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বাড়িয়ে বসে ফুসফুসের কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। তো নিতে ব্যায়ামগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে যতক্ষণ সম্ভব ধরে রাখতে এবং এরপরে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হবে। এরফলে ফুসফুসের কোষগুলোর ব্যায়াম হয়, ফলে সেটির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে না।

নিয়মঃ

  • পিঠ সোজা করে আরাম করে বসতে হবে।
  • এরপর প্রথমে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস দিয়ে ফুসফুসের সব বাতাস বের করে দিতে হবে।
  • এরপর আবার গভীর শ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব ফুসফুসে বাতাস ভরে নিতে হবে।
  • এরপর যতক্ষণ সম্ভব হয়, শ্বাস আটকে রাখুন।
  • এরপর আবার একসাথে সব বাতাস বের করে দিন।
  • এভাবে দিনে অন্তত দুইবার এইরকম ব্যায়াম করা যেতে পারে।
  • এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডা. আলতাফ হোসেন সরকার পরামর্শ দেন যে, লম্বা শ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এবং আস্তে আস্তে একসেকেন্ড, দুই সেকেন্ড করে বাড়াতে হবে।

ইনসেন্টিভ স্প্যারোমেট্রি এক্সারসাইজ

নিয়মঃ

  • এখানে ছোট্ট একটা ডিভাইসের মধ্যে তিনটা বল থাকে।
  • শ্বাস দিয়ে রোগীদের সেই বলগুলো ডিভাইসের ভেতরে তুলতে হয়।
  • তিনটা বল তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে আবার ছেড়ে দি হয়। এভাবে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে।

প্রথমদিন হয়তো একটা, পরের দিন আরেকটা, এভাবে আস্তে আস্তে বল তোলার ক্ষমতা বাড়ে। ফুসফুস ভালো রাখতে এই ব্যায়ামটি খুবই সহায়ক।

নাক বন্ধ করে শ্বাস নেয়ার ব্যায়ামঃ

নিয়মঃ

  • হাত দিয়ে প্রথমে নাকের বাম পাশ বন্ধ করে ডান পাশ দিয়ে লম্বা শাস নিন।
  • ৫/১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন।
  • এরপর শ্বাস ছেড়ে দিন।
  • এরপর নাকের ডান পাশ চেপে ধরে একই ভাবে শ্বাস নিন।
  • একইভাবে ৫/১০ সেকেন্ড ধরে রেখে শ্বাস ছেড়ে দিন।

এভাবে প্রতিদিন কয়েকবার করে অভ্যাস করুন। এতে করে আপনার ফুসফুস ভালো থাকবে।

কিন্তু কারো যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা কাশি থাকে, কিংবা অনেকদিন যাবত হৃদরোগে ভোগেন তখন উপরোক্ত এই ধরণের ব্যায়াম না করাই ভালো। এক্ষত্রে আপনাকে ডাক্তারের শরনাপন্য হতে হবে।

উপসংহারঃ

তো এইগুলোই হচ্ছে ফুসফুস ভালো রাখার উপায় । এই উপায়গুলো শতভাগ সঠিক এবং প্রাকৃতিক। যদি এই উপায়গুলো অনুসরন করে ফল না পান কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হয় তাহলে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।

সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুনঃ

Avatar of Shakib Hasan

Blogger and SEO Expert. Founder of Techbdtricks. I always try to explore something new and let the people know about that. Keep me in your prayers.

Leave a Comment